নারী-পুরুষ এর সমান অধিকার পৃথিবীর সকল স্থানে হওয়া উচিৎ। নিউইয়র্ক ‘নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হোন’ মন্ত্রে উজ্জীবিত প্রবাসী তরুণী এবং গৃহবধূরা সংগঠিত হচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে গত তিন সপ্তাহে নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলীনে চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড এলাকায় এভিনিউ সি প্লাজা, জ্যাকসন হাইটস, রিচমন্ড হিলে জড়ো হয়েছিলেন এসব এলাকার নারীরা।
আলোচনা করেছেন নির্বিঘ্ন চিত্তে। এসময় তারা নিজ নিজ ঘর, সমাজ, ব্যাণিজ্যিক এলাকার অবস্থা তুলে ধরেন।সভ্যতার শীর্ষে অবস্থানকারি দেশে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দাবিদার নিউইয়র্ক সিটিতে বসতি গড়েও যে আপনজনের হাতে প্রতিনিয়ত নিগৃহিত হচ্ছেন তা অবলিলায় ব্যক্ত করেন তারা। পারিবারিক ঐতিহ্য এবং সামাজিকতা বিবেচনায় রেখে এখনও অধিকাংশই ৯১১ এ কল করেননি বলে উল্লেখ করেন। আয়োজকরা অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় সবকিছু হ্যান্ডেল করার পরামর্শ দেন।
পুলিশ ডাকাডাকিতে কখনোই সমস্যার সমাধান হয় না। অধিকন্তু পরিস্থিতি আরো জটিল হয়, যার পরিণতি কারো জন্যেই শুভ হয় না বলেও তারা মন্তব্য করেন। শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যেই ঘটে যাওয়া বেশ কটি ঘটনা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় আয়োজকদের পক্ষ থেকে।
এটি ছিল নিউইয়র্ক সিটিতে চতুর্থ সমাবেশ। এর আগে জ্যাকসন হাইটসে দুটি এবং রীচমন্ড হীলে একটি সমাবেশ হয়েছে।
এসব পরামর্শ সভায় উদ্যোক্তাদের অন্যতম কাজী ফৌজিয়া জানান, সুন্দর জীবনের জন্যে আটলান্টিক পাড়ি দেয়ার পরও অনেকের বোধোদয় ঘটেনি। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মনমানসিকতা জিইয়ে রেখে স্ত্রী এবং উঠতি বয়েসী কন্যাদের গৃহবন্দি করে রাখতে চাচ্ছেন। যোগ্যতা থাকা সত্বেও অনেকেই শ্রম দিতে পারছেন না। ফলে আর্থিক কারণে স্বামী/বাবা অথবা পরিবারের পুরুষ প্রধানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। অথচ নারীরা যদি কাজ করেন তাহলে সেই পরিবারের স্বাচ্ছন্দ বাড়ে খুব দ্রুত।
এই আমেরিকায় আর্থিক এবং সামাজিকভাবে যারাই প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছেন তাদের সিংহভাগের উপার্জনে রয়েছেন স্বামী-স্ত্রী-সন্তানেরা। তারা সুখে রয়েছেন। পারিবারিক অশান্তি নেই। আমেরিকান স্বপ্ন পূরণে অনন্য উদাহরণে পরিণত হয়েছেন ঐসব মানুষগুলো। এসব দেখেও না দেখার ভান করে আছেন অনেক প্রবাসী। এ শ্রেণীর প্রবাসীর পরিবারে সংকট, অবহেলা-অনাদরের ঘটনা বিদ্যমান। প্রতিনিয়ত ঝগড়া হচ্ছে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে। উঠতি বয়েসী কন্যারা ভেতরে ভেতরে জ্বলে মরছে। এমন অবস্থার উত্তরণে চাই প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিং। এটি হতে পারে উভয় পক্ষ থেকে। আমরা সে পথেই হাঁটছি। কারণ আমরা সংসারে ভাঙন দেখতে চাই না।
নিউইয়র্ক অঞ্চলে দক্ষিণ এশিয়ানদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘দেশীজ রাইজিং আপ এ্যান্ড মুভিং’ (ড্রাম) এর অন্যতম সংগঠক কাজী ফৌজিয়া বিগত বছরগুলোকে তৃণমূলে কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, মামুলি অজুহাতে অনেক পরিবার ভেঙ্গে গেছে। অনেক মা-কে সন্তান হারাতে হয়েছে। আবার কেউ কেউ পুলিশ ডেকে গৃহত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। এখনও কিছু মা সিটি শেল্টারে দিনাতিপাত করছেন। এসব ঘটনা কখনোই একটি উঠতি কমিউনিটির জন্যে সুখকর হতে পারে না।
আমরা যারা প্রকাশ্যে এমন ওয়ার্কশপ পরিচালনা করছি, তারা শতভাগ পারিবারিক বন্ধনের পক্ষে। সে আলোকে কথাবার্তা হচ্ছে নিজের মধ্যে। পুরুষরা সাথে থাকলে অনেকে প্রকৃত পরিস্থিতি উপস্থাপনের সাহস পান না বলে নারীরা একত্রিত হচ্ছি। সব নারীকে সচেতন করা হচ্ছে এই দেশের আইনের আলোকে। লিঙ্গভিত্তিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে কীভাবে সংগঠিত হতে হয় তা নিয়ে খোলামেলা মতবিনিময় করেন সকলে। নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন জেনসিন রায়হান, রুবি, ফরিদা, শেফালি শাহীন, শেরিন প্রমুখ।