জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে বৈঠকের পর আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের সামনে ‘উপাচার্য অপসারণ মঞ্চে’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে প্রায় আড়াই মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে উপাচার্য ফারজানা ইসলামের ‘মধ্যস্থতায়’ ছাত্রলীগকে বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগের তদন্তের দাবিতে এ আন্দোলন শুরু হয়। দাবি পূরণ না হওয়ায় গত ২ অক্টোবর থেকে উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে গত রোববার থেকে সপ্তাহব্যাপী লাগাতার অবরোধ-ধর্মঘট পালন করেছেন তাঁরা।
টানা অবরোধ ও ধর্মঘটে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রমে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে গতকাল রোববার রাত আটটা থেকে ১০টা পর্যন্ত রাজধানীর হেয়ার রোডে শিক্ষামন্ত্রীর বাসভবনে আন্দোলনকারী সাতজন শিক্ষকের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
এ বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী আমাদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক বিষয় ও জটিলতা সম্পর্কে জানতে চান। আমরা বর্তমান উপাচার্যের দুর্নীতি, অনিয়ম, অযোগ্যতা, একগুঁয়েমি ও অগণতান্ত্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার বিষয় ও প্রমাণ তুলে ধরি। তিনি এসব বিষয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করবেন বলে জানান।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী আমাদের কাছে উপাচার্যের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ লিখিতভাবে চেয়েছেন। আমরা শিগগিরই অভিযোগ জানাব। তিনি নিজের জায়গা থেকে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।’ তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছেন, তবে উপাচার্যকে অপসারণে দৃশ্যমান অগ্রগতি ছাড়া আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান অবরোধ-ধর্মঘট কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাহাথির মোহাম্মদ।
এদিকে দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে টানা ১০ম দিনের মতো প্রশাসনিক ভবন অবরোধ ও ৯ম দিনের মতো সর্বাত্মক ধর্মঘট কর্মসূচি অব্যাহত আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের কার্যক্রম কার্যত বন্ধ থাকলেও ধর্মঘট উপেক্ষা করে বিভিন্ন বিভাগের উপাচার্য সমর্থক শিক্ষকেরা ক্লাস-পরীক্ষা নিয়েছেন।
গ্রাফিতিতে প্রতিবাদ
চলমান উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে এবার দেয়ালে গ্রাফিতি এঁকে ‘দুর্নীতি’ ও উপাচার্যের ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের দেয়ালে এই গ্রাফিতি আঁকা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই গ্রাফিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগকে প্রতিফলিত করে। পাশাপাশি কোনোরকম তদন্ত ছাড়াই শিক্ষকদের একটি অংশের দুর্নীতির অভিযোগকে ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ বলার প্রবণতার প্রতিবাদ জানায়।
:প্রথম আলো