রবিবার থেকে শুরু হয়েছে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার গোপালপুরের কুন্ডু বাড়িতে দক্ষিণবঙ্গের সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যবাহী কুন্ডু বাড়ির মেলা। প্রতি বছর কালিপূজা ও দিপাবলী উপলক্ষে আয়োজন করা হয় এ মেলার। মেলা চলবে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত।
প্রায় আড়াইশ’ বছর ধরে দক্ষিণবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী এই মেলাটি ‘কুন্ডু বাড়ির মেলা’ নামে পরিচিত। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কাঠের আসবাবপত্রের সমারোহ ঘটে এই মেলায়। এতে মাদারীপুরসহ বৃহত্তর ফরিদপুর, বরিশাল জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার লোকের ঢল নামে এ মেলায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালকিনি উপজেলার গোপালপুরের কুন্ডু বাড়িতে ১৭৮৩ সালের নভেম্বরে দিপাবলী ও কালিপূজা উপলক্ষে দীননাথ কুন্ডু ও মহেশ কুন্ডু এই মেলার প্রবর্তন করেন। তাই কুন্ডুদের বংশের নামানুসারে মেলার নাম হয় কুন্ড বাড়ির মেলা। এই সময় দিপাবলীর পরের দিন এই অঞ্চলের বিভিন্ন কালি প্রতিমা জড়ো করা হত। এর মধ্যে যাদের প্রতিমা সর্বদিক থেকে সেরা হতো তাদের পুরস্কার প্রদান করা হত। সেই সময় চিত্তবিনোদনের জন্য পুতুল নাচ, কবিগান, জারি গান, পালা গান, নৌকা বাইচের আয়োজন করা হত। কালের বিবর্তনে পালা গান, জারি গান, নৌকা বাইচ বন্ধ থাকলেও পুতুল নাচ ও নাগর দোলার আয়োজন এখনো আছে।
বংশ পরম্পরায় প্রতি বছর এ মেলা আয়োজন করা হয়ে থাকে। বর্তমানে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মেলা বসে। শুধু কুন্ড বাড়ি জুড়ে নয় ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের গোপালপুর এলাকার দু’পাশে বসেছে শত শত দোকান। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দোকানিরা বিভিন্ন পণ্যের পশরা সাজিয়ে বসেন। কাঠের বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্রের জন্য এই মেলা বিখ্যাত।
মেলায় মাদারীপুর ছাড়াও ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, শরিয়তপুর, বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট, মাগুরা, যশোর, নড়াইলসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা তাদের মাটির, বাঁশের ও কাঠের তৈরি বিভিন্ন মালামাল ট্রাকযোগে বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। প্রতি বছরের তুলনায় এবার কাঠের ফার্নিচারের চাহিদা বেশি রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে দু-একদিন পরে মেলা জমে উঠলে বিক্রি বাড়বে।
মেলায় আসা কার্তিক মন্ডল নামে এক কাঠ ব্যবসায়ী জানান, আমরা গত ১৫ বছর ধরে এই মেলায় আসবাবপত্র বিক্রি করার জন্য আসছি। এ মেলায় কাঠের আসবাবপত্র বেশি বিক্রি হয়। ক্রেতাদের চাহিদা বুঝে বিভিন্ন ডিজাইনের আসবাবপত্র মেলায় নিয়ে এসেছি। অনেক কাঠের দোকান বসেছে মেলায়।
মেলায় ঘুরতে আসা হাসান নামের এক যুবক বলেন, দক্ষিণবঙ্গের সর্ববৃহত এ মেলা দেখার জন্য দূর থেকে এসেছি। এত বড় মেলা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতো না। সব ধরনের জিনিসপত্র মেলায় রয়েছে। জিনিসপত্রের মধ্যে কাঠের নানান ডিজাইনের আসবাবপত্র বেশি উঠেছে।
কালকিনি থানার ওসি (তদন্ত) মো. হারুন আর রশীদ জানান, মেলায় যাতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে জন্য সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার জন্য সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মেলায় সব সময় পুলিশ মোতায়েন থাকবে।