অবশেষে দুই পক্ষের মুখেই হাসি। হাসতে হাসতেই রাত গভীরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এবং বাংলাদেশ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। দুই জনেই জানালেন যে, ক্রিকেটারদের উত্থাপিত প্রথম ১১ দফা দাবির মধ্যে ৯টি মেনে নিয়েছে বিসিবি। একটি দাবি বিসিবির আওতার বাইরে থাকায় সেটি মেনেছে কোয়াব। আর একটি দাবি পরে বিবেচনা করবে বিসিবি। তার ফলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ক্রিকেটাররা। জানানো হয়েছে, আগামী শুক্রবার থেকে অনুশীলনে যোগ দেবেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। আর শনিবার শুরু হবে জাতীয় ক্রিকেট লিগের খেলা।
বুধবার সারাদিন ছিল একটা থমথমে পরিস্থিতি। আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে নিজের অবস্থান জানিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এবং পরিচালক ও কোয়াব সভাপতি নাঈমুর রহমান দুর্জয়। সেখান থেকে ফিরে পাপন বললেন, ক্রিকেটারদের সব দাবি মেনে নিতে প্রস্তুত তারা। কিন্তু ক্রিকেটারদের সাড়া মিলছিল না।
অবশেষে সন্ধ্যার পর এক হোটেলে ক্রিকেটারদের পক্ষে কথা বললেন ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান। তিনি উত্থাপিত করলেন ১৩ দফা দাবি। এবার ক্রিকেটাররা বিসিবির লাভের অংশও দাবি করলেন। এদিকে বিকাল থেকেই ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলোচনার জন্য বিসিবি কার্যালয়ে বসে রইলেন সভাপতিসহ অন্যান্য পরিচালক। অবশেষে ক্রিকেটাররা সংবাদ সম্মেলন শেষ করে এলেন বিসিবিতে। শুরু হলো বৈঠক। রাত সাড়ে ৯টায় শেষ হলো দুই পক্ষের বৈঠক।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পাপন বললেন, ‘ওরা এসেছে। ওদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি আগেই বলেছি, ওদের সব দাবিই মানার মতো। তাই হয়েছে। আমরা দুটো ছাড়া সব দাবি মেনে নিয়েছি।’ এরই মধ্যে ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াব নিয়ে যে দাবি, সেটা মেনেছে কোয়াব। আর ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট দুইয়ের বেশি খেলা বিষয়ক দাবির ক্ষেত্রে বিসিবি পরে বিবেচনা করতে চায়। পাপন জানান, দুই চার দিনের মধ্যেই খেলোয়াড়দের চাওয়া মতো বেতন, ম্যাচ ফি, ভাতা ইত্যাদি বাড়ানো হবে। আর অবকাঠামোগত কাজগুলো তারা একসঙ্গে সব বিভাগে শুরু করতে চান।
সাকিব আল হাসান তার বক্তব্যে বলেন, ‘আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আমাদের সব কথা ওনারা শুনেছেন। ফলে শনিবার থেকে জাতীয় লিগ ও আমাদের অনুশীলন শুরু হবে।’
সোমবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের অ্যাকাডেমি মাঠে ৩০ জনের বেশি ক্রিকেটার জড়ো হয়ে ১১ দফা দাবি উত্থাপন করে জানান যে, এসব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের খেলা বা অনুশীলনে যোগ দেবেন না তারা। পরের দিন মিরপুরেই সংবাদ সম্মেলন কক্ষে বিসিবি সভাপতি বলেন, ক্রিকেটারদের এই দাবি উত্থাপনের ভঙ্গিতে তিনি মনে করছেন, এর পেছনে ষড়যন্ত্র আছে।
গতকাল সকাল থেকে অপেক্ষা ছিল ক্রিকেটারদের পালটা প্রতিক্রিয়া জানার জন্য। দুপুরে বিসিবির প্রধান নির্বাহী গণমাধ্যমের সামনে বলেন, তারা অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারছেন না ক্রিকেটারদের সঙ্গে। তিনি মিডিয়ার মাধ্যমেই ক্রিকেটারদের বলেন, তারা আলোচনার জন্য তৈরি আছেন। যে কোনো সময় আলোচনা হতে পারে। বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস একই আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, তারা অপেক্ষা করছেন আলোচনার জন্য। এর মধ্যেই গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন নাজমুল হাসান পাপন ও নাঈমুর রহমান দুর্জয়। সেখান থেকে বেরিয়ে পাপন বলেন, ‘আমরা খেলোয়াড়দের সব দাবিদাওয়া মেনে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি; কিন্তু তাদের সঙ্গে যোগাযোগের পরেও ফোন ধরছে না। আমরা বলছি, সবগুলো দাবি মানার মতো, এটা কোনো সমস্যাই না। এলেই শেষ। তারপরও আমরা যোগাযোগ করছি, তারা ফোন ধরছে না। ওরা কোনো যোগাযোগ করছে না। তাহলে করবটা কী বলেন?’
এরপর বিসিবি সভাপতিসহ বোর্ডের অধিকাংশ পরিচালক বিসিবি কার্যালয়েই অপেক্ষা করতে থাকেন। ওদিকে সন্ধ্যা বেলায় গুলশানের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন শুরু করেন ক্রিকেটাররা। এদিন পঞ্চাশ জনেরও বেশি ক্রিকেটার ছিলেন। তবে তাদের হয়ে কথা বলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান। তিনি ১১ দফার বদলে ১৩ দফা উত্থাপন করেন।
আগের ১১ দফার সঙ্গে যোগ হলো আরো দুই দফা। এই দুই দফার একটি হলো বিসিবির লভ্যাংশ ভাগাভাগি করতে হবে ক্রিকেটারদের সঙ্গে। ক্রিকেটাররা এই অর্থ নিয়ে কী করবেন, সেটাও বলা হলো। বলা হলো এই অর্থ দিয়ে ক্রিকেটারদের জন্য একটা কল্যাণ ফান্ড তৈরি করবে নির্বাচিত ক্রিকেটারদের অ্যাসোসিয়েশন। আর সেই ফান্ড থেকে অবসর নেওয়া ক্রিকেটারদের পেনশন, হঠাত্ ইনজুরিতে পড়া বা অসুস্থ হওয়া ক্রিকেটারদের চিকিত্সার মতো আপত্কালীন খরচ চালানো হবে।
আরেকটি দাবি বাড়ানো হয়েছে নারী ক্রিকেটারদের জন্য সমান আয়ের ব্যবস্থা করা। ক্রিকেটাররা বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটারদেরও পুরুষ ক্রিকেটারদের মতোই সম্মান প্রাপ্য। ফলে তাদের বেতন-ভাতা ও সুবিধাদি আরো বাড়িয়ে পুরুষদের সমান করা উচিত।