কিছুটা কড়াকড়ি আরোপ করায় এখন কেউ চাইলেই আর সঞ্চয়পত্র কিনতে পারছেন না। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে অনলাইন পদ্ধতি চালুর পাশাপাশি নিয়মকানুন কঠোর করায় সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে। গত জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত তিন মাসের চিত্র বিশ্লেষণ করলেও এর সত্যতা পাওয়া যায়।
গত জুলাই থেকে ১ লাখ টাকার বেশি মূল্যমানের সঞ্চয়পত্র কিনতে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ও ব্যাংক হিসাব বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এরই প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বলে জানান জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। দপ্তরটির দীর্ঘ বছরের চাওয়া হচ্ছে একই ব্যক্তির একাধিক জায়গা থেকে সঞ্চয়পত্র কেনার প্রবণতা বন্ধ করা। গত জুলাই থেকে এ ব্যাপারেও ফল পাওয়া যাচ্ছে বলে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মনে করছেন।
সঞ্চয় অধিদপ্তরের সূত্রগুলো জানায়, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকার। পরের মাস আগস্টে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি আরও কমে গেছে। এ মাসে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা।
অথচ অনলাইন পদ্ধতি চালু হওয়ার আগে গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ৩ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরের শুরু অর্থাৎ ২০১৮ সালের জুলাই মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের এক বিশ্লেষণ অনুযায়ী সঞ্চয়পত্রের উচ্চ মুনাফা বা সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে সরকারের নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনার ওপর চাপ পড়ছে। ২০০৮-০৯ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত ১০ বছরে সরকারকে সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি।
অর্থনীতিবিদেরা দীর্ঘ কয়েক বছর থেকেই বলে আসছেন, সঞ্চয়পত্র যাঁদের জন্য চালু করা হয়েছিল, তাঁরা তা কিনতে পারছেন না, বরং একশ্রেণির কালোটাকার মালিক, আমলা, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে সরকারের দেওয়া উচ্চ সুদের ভাগ নিচ্ছেন।
পেনশনার সঞ্চয়পত্রের সুদ ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ।
পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদ ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ।
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদ ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
তাই চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার না কমিয়ে সরকার উল্টো উৎসে কর বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে দেয়। অর্থাৎ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ, কিন্তু বিনিয়োগ ৫ লাখ টাকার বেশি হলেই তা ১০ শতাংশ।
পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন বছর মেয়াদি তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র এবং পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রে ৫ লাখ টাকা পুঞ্জীভূত বিনিয়োগের মুনাফার ক্ষেত্রে উৎসে কর ৫ শতাংশ। এর বেশি বিনিয়োগ হলেই সুদের ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশ। আর পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ৫ লাখ টাকা পুঞ্জীভূত বিনিয়োগের সুদের ক্ষেত্রে কোনো উৎসে কর নেই। তবে এ সঞ্চয়পত্রে এর বেশি বিনিয়োগের মুনাফার ক্ষেত্রে উৎসে কর ১০ শতাংশ।
বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। এ ছাড়া পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদ ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদ ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রের সুদ ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। সঞ্চয় অধিদপ্তরের আর্থিক পণ্য হচ্ছে সঞ্চয়পত্র। এটি বিক্রি হয় দেশের ৭৫টি সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এর শাখা অফিস এবং ডাকঘরের মাধ্যমে। সঞ্চয় ব্যুরোগুলো অবশ্য সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে কোনো একটি ব্যাংকের মাধ্যমে।
:প্রথম আলো