নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে মা ও দুই মেয়েকে জবাই করে নৃসংশভাবে হত্যা করা হয়েছে। নিহতরা হলেন-নাজনীন (২৫), তার দুই মেয়ে নুসরাত (৫) ও সুনাইনা ওরফে খাদিজা (২)। আহত হয়েছে নাজনীনের বোনের মেয়ে সুমাইয়া (১২)। প্রাথমিকভাবে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে ঘাতক নাজনীনের ভগ্নিপতি আব্বাস এবং আহত সুমাইয়া তার মেয়ে।
সুমাইয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১ নং ওয়ার্ডের সিআই খোলা এলাকার আনোয়ারের ষষ্ঠতলার একটি ফ্লাটে। সেখানে ভাড়া থাকত নিহত নাজনীনের পরিবার।
এদিকে বেলা ২টার দিকে জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঢাকা থেকে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌছে হত্যার আলামত সংগ্রহ করেছেন। পরিদর্শন শেষে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। বিস্তারিত এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে ঘাতক নিহতের ভগ্নিপতি আব্বাস। সে তার নিজের মেয়ে সুমাইয়াকেও আঘাত করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত নাজনীনের স্বামী সুমন মিয়া সানাড়পাড় এলাকায় জোনাকি পাম্প স্টেশনের চাকরি করে। রাতে ডিউটি শেষে সকাল ১০টায় সুমন বাসায় ফিরে দেখে স্ত্রী ও দুই কন্যার লাশ পড়ে আছে। পরে তার ডাক চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এসে পুলিশকে খবর দেয়।
তিনজনকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় হতভম্ব হয়ে গেছেন নিহত শিশুদের বাবা ও নাজনীনের স্বামী সুমন মিয়া। সুমন মিয়া বলেন, প্রতিদিনের মতোই আমি কাজে গিয়েছিলাম। কাজ শেষ হলে সকাল ১০টায় বাড়ি ফিরে দেখি ঘরের দরজা খোলা। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখি, বউ আর দুই মেয়ের গলাকাটা রক্তাক্ত মরদেহ। এ ঘটনায় স্ত্রীর বোনের মেয়ে সুমাইয়াও রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরে পড়েছিল।
সুমন আরও জানান, তিনি এ দৃশ্য দেখে কিছুক্ষণ নিথর হয়ে পড়ে ছিলেন। কী করবেন দিশেহারা হয়ে অন্য ভাড়াটিয়া ও আত্মীয় স্বজনকেসহ পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে। সুমন বলেন, আমি জানিনা কে বা কারা আমার পরিবারকে হত্যা করলো। আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই, হত্যাকারী যেই হোক সে কীভাবে সপরিবারে সবাইকে হত্যা করতে পারল?
নিহতের ছোট ভাই হাসান বলেন, আমার বড় বোনের স্বামী আব্বাস প্রায়ই মাদক সেবন করে এসে সকলকে মারধর করতো। বুধবার রাতে আমার বোন ও তার মেয়ে পালিয়ে আমার ছোট বোন নাজনীনের বাসায় আসে। তাদের নিতে এসেই সে নাজনীন ও তার দুই মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করেছে। এসময় হয়ত তার মেয়ে বাঁধা দিতে গেলেও সে নিজের মেয়েকেও ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে আহত করেছে। এ সময় সুমাইয়ার মা একটি গার্মেন্টেস ছিল। এ বিষয়ে বোনও কিছু জানে না।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ফারুক জানান, সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের কর্মকর্তারা আলামত সংগ্রহ করেছে। পাশাপাশি জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন ও র্যাবসহ অন্যান্য সংস্থা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আব্বাসের মেয়ে সুমাই বাক প্রতিবন্ধী, তার অবস্থাও গুরুতর হাসপাতালের ডাক্তার ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।
ঘটনার পর থেকেই আব্বাস পলাতক ছিল। বিকাল ৩টার দিকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাকে আটক করেছে।ইত্তেফাক