যুদ্ধ বিধ্বস্ত’ দেশ আফগানিস্তানের চলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে সেখানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে তালেবান নেতাদের সঙ্গে বৈঠক চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে আফগানিস্তানের চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বন্ধে দেশটির পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান তেমন কোনো ভূমিকা রাখছে না, এমনটি জানিয়ে এতে আক্ষেপই প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) এমন তথ্যই জানায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বুধবার (২১ আগস্ট) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ভারত, ইরান, রাশিয়া ও তুরস্কের মতো দেশেরও উচিৎ আফগানিস্তানের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করা। প্রায় সাত হাজার মাইল দূর থেকে যুক্তরাষ্ট্রই আফগানিস্তানের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। বিপরীতে বাকি দেশগুলোর তেমন ভূমিকা নেই।
ট্রাম্প বলেন, আফগানিস্তানের কাছেই ভারতের অবস্থান। কিন্তু তারা দেশটির সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামছে না। অন্যদিকে আফগানিস্তানের ঠিক পাশে রয়েছে পাকিস্তান। তারা আফগান সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তবে সেটি খুব অল্প পরিসরে। যা মোটেও ঠিক নয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ভারত, পাকিস্তান, ইরান, রাশিয়া ও তুরস্কের মতো দেশকে আফগানিস্তানের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ আমরা চাই না এ যুদ্ধ আরও ১৯ বছর ধরে চলুক।
১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণেই ছিল আফগানিস্তান। পরবর্তীতে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের যৌথ অভিযানে তাদের ক্ষমতার অবসান হয়। এরপর থেকেই পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তারা। বর্তমানে তালেবানরা আফগানিস্তানের বেশির ভাগ এলাকার দখল নিয়েছে। তারা চায় সেখান থেকে বিদেশি সেনা সরিয়ে নেওয়া হোক।
দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে চলা এ সহিংসতার সমাপ্তি টানতে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান গোষ্ঠীর মধ্যে শান্তি আলোচনা চলছে।
সর্বশেষ গত ৩ আগস্ট কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবান নেতাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অষ্টম দফায় ‘শান্তি আলোচনা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেটিকে দু’পক্ষের সমঝোতার ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’ অধ্যয় হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
যদিও ‘শান্তি আলোচনা’ ইতিবাচকভাবেই এগিয়ে চলছে বলে জানায় উভয় পক্ষই, তবে এর মধ্যেই একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে আফগানিস্তানে।
সর্বশেষ গত ১৭ আগস্ট স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে দেশটির রাজধানী কাবুলে একটি বিয়ে বাড়িতে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৬৩ জন নিহত হন। আহত হন ১৮০ জনেরও বেশি।
ফলে এসব হামলার পরও ওই আলোচনা কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়েই এখন শঙ্কা।
আফগান সেনাদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তার উদ্দেশে দেশটিতে বর্তমানে ২০ হাজার ন্যাটো সেনা রয়েছে। যার অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্রের।
শান্তি আলোচনায় তালেবানদের মূল দাবি ছিল, আফগানিস্তান ধেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার। অন্যদিকে নিরাপত্তা পুরোপুরে নিশ্চিত হলে তবেই বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) ‘আফগানিস্তান থেকে পুরোপুরিভাবে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করলে তালেবানরা ফের দেশটি নিজেদের দখলে আনার চেষ্টা চালাবে না, এমন নিশ্চিয়তা পাওয়ার পরই সেখান থেকে বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহার করা হবে’ এমনটিই জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।