কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বিক্রি বেড়েছে দা-বটি-ছুরি-চাকুর।কোরবানির পশু জবাই করার বড় বড় ছুরি, হাড় কাটার বড়-মাঝারি আকারের দা, চামড়া ছাড়ানোর বিভিন্ন মাপের চাকু, মাংস কাটার বড়-মাঝারি মাপের বটি শোভা পাচ্ছে দোকানে দোকানে।
ধারালো নানা আইটেমের এসব সরঞ্জামাদি থরে থরে সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। কারণ ঈদুল আজহা আসন্ন। বছরের ১১ মাসের মন্দাভাব এই এক মাসে পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তারা। তাই প্রতিবছর কোরবানির ঈদে তাদের প্রস্তুতিটা থাকে ভিন্ন। এবারও তার ব্যতয় হয়নি। বরং এবার ক্রেতা টানতে কামারশালায় তৈরি এসব সরঞ্জামাদিতে অনেকটা ভিন্নতা আনার চেষ্টা করা হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় তৈরি যন্ত্রপাতির সঙ্গে টেক্কার ব্যাপারটি মাথায় রেখে এমনটা করা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে অনেকটা সফলও তারা।
কিন্তু সবকিছুই নির্ভর করছে বেচাবিক্রির ওপর। কারণ এখনো বিকিকিনি পুরোদমে জমে ওঠেনি। তবে দিন যাচ্ছে দোকানে দোকানে ভিড় বাড়ছে। সঙ্গে বেচাবিক্রিও বাড়ছে। কোরবানির পশু কেনার শেষ দিকে এসে চূড়ান্ত ভিড় পড়ে যায় এসব দোকানে। তাই ঈদের শেষ রজনীর অপেক্ষায় দা-বটি-ছুরি-চাকু বিক্রেতারা। কারণ ঈদুল আজহার কয়েকদিনে যা বিক্রি হয় তার কয়েকগুণ বেশি সরঞ্জামাদি বিক্রি হয় ঈদের আগের দিন ও রাত মিলে।
বগুড়ার শহরের রাজাবাজার, কাঁঠালতলাসহ একাধিক স্থানে গড়ে ওঠা কোরবানির ঈদ কেন্দ্রিক মৌসুমি দা, ছুরি, চাকু ও বটির দোকানির সঙ্গে কথা হলে এসব তথ্য ওঠে আসে।
বিক্রেতা আবু জাফর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, অনেকেই এখনো কোরবানির পশু কেনাকাটার কাজ শেষ করতে পারেনি। অথচ হাতে আছে আর মাত্র কয়েকটি দিন। এ কারণে অনেকেই এখনো কোরবানির পশু কেনা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পশু কেনার হলে তার ছুটবেন তাদের দোকানে দোকানে বলে যোগ করেন এই বিক্রেতা।
আরেক বিক্রেতা ইমদাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, একটি করে দিন যাচ্ছে আর দোকানে দোকানে ক্রেতাদের পদচারণা বাড়ছে। তবে হাতে কিছু সময় থাকার কারণে ক্রেতারা ব্যাপক দামাদামি করছেন। এতে তাদের জিনিসপত্র বিক্রি করাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু কিইবা করার আছে। এটা তো ব্যবসা। দরদাম করেই ক্রেতা জিনিসপত্র কিনবেন। তবে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রমেই বিক্রি বাড়ছে।
বিক্রেতা হরিপদ সাহা বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিটি জিনিস তৈরিতে আগের চেয়ে শ্রমসহ উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। বাজারে সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের তৈরি জিনিসপত্রের ওপর সেই প্রভাব পড়েছে। এ কারণে গেলো বছরের তুলনায় বেশ কিছু আইটেমের জিনিসের দাম সামান্য বেড়েছে। যা অনেক ক্রেতা বুঝতে চায় না। এরপরও ক্রমেই বিক্রি বাড়ছে।
এসব বিক্রেতারা বলছেন, মূল বেচাবিক্রি হয় ঈদ রজনীতে। সারাদিন বিকিকিনির পর সন্ধ্যা থেকে ক্রেতা সাধারণ দোকানে দোকানে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে যেন হুমড়ি খেয়ে পড়েন। বর্তমানে প্রতিটি বড় মাপের ছুরি ৪-৭শ টাকা, চামড়া ছাড়ানোর চাকু ২০-৭০ টাকা, বিভিন্ন মাপের দা ৩শ-১০০০টাকা, বটি ২-৪শটাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতা আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিটি জিনিসের দামই বেশি। এজন্য জিনিস কেনাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। তবু প্রয়োজন থাকায় দামদর করে কয়েকটি ছোট চাকু ও একটি দা কিনেছেন।
একই কথা জানিয়ে আরেক ক্রেতা আব্দুল মোমিন বাংলানিউজকে বলেন, দোকানিরা জানেন যে পশু জবাই করতে এসব জিনিসের প্রয়োজন। তাই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা বাড়তি দাম নিচ্ছেন। তিনি একটি বড় ছুরি ও কয়েকটি ছোট চাকু কিনেছেন।