পাঁচ জেলায় ৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত

সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। দিন দিন বেড়েই চলেছে রোগীর সংখ্যা। দেশের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষই ঢাকা ফেরত। ইতোমধ্যে পাঁচ জেলায় ৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর নিয়ে ইত্তেফাক অনলাইনের ডেস্ক রিপোর্ট।

ফেনী: ২৫ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই রবিবার পর্যন্ত ফেনী আধুনিক জেনারেল হাসপাতালে ২০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন নারী রয়েছেন। হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স সুচিত্রা মল্লিক জানান, এসব রোগীরা সকলেই ঢাকা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।

হাসপাতালের ৩ নং ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, কুমিল্লা থেকে একজন, নোয়াখালী থেকে একজন, চট্টগ্রাম থেকে একজন এবং ফেনী রামপুর নাসির মেমোরিয়াল কলেজের ছাত্র মো. ইউসুফ ঢাকায় বেড়াতে গেলে তিনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। পরে তিনি দ্রুত ফেনী জেনারেল হাসপাতালে এসে ভর্তি হন। এছাড়াও ঢাকা আহছান উল্যাহ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল মজিদসহ বাকী সবাই ঢাকায় আক্রান্ত হয়ে ফেনীতে ভর্তি হয়েছেন। তাদের প্রত্যেকের বাড়ি ফেনী জেলায়।

হাসপাতালের সুপারিন্টেনডেন্ট ডা. বিধান সেন চন্দ্র গুপ্ত ইত্তেফাককে বলেন, এই জ্বর থেকে নিস্তার পেতে হলে জনসচেতনতা ও পৌরসভা এবং প্রশাসনের দ্রুত গণসংযোগের মাধ্যমে মশা নিধনের ব্যবস্থা করতে হবে। না হয় এটি ফেনীতেও মহামারি আকারে দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ঢাকা থেকে আসা এক রোগী জানান, ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদেরকে ভর্তি করা হচ্ছে না। হাসপাতালগুলিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এতই বেশি যে, সেখানে চিকিৎসা পাওয়া কঠিন। তাই চিকিৎসার জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়েছেন।

সাতক্ষীরা: গত ২২ জুলাই থেকে রবিবার পর্যন্ত সাতক্ষীরায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ৯ জন রুগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানা গেছে। তারা সাতক্ষীরা সদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ডেঙ্গু আক্রান্তরা হলেন- আশাশুনি উপজেলার দরগাপুর ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের বাবুর আলীর ছেলে হামিদুল ইসলাম (৩৫)। তিনি সর্ব প্রথম গত ২২ জুলাই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হন।

এরপর পর্যায়ক্রমে যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তারা হলেন- দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া এলাকার মাহাবুবার রহমানের ছেলে মেহেদি হাসান (২৮), সাতক্ষীরা সদর উপজেলার চুপড়িয়া মাধবকাটি গ্রামের মৃত মালেক সরদারের ছেলে দিনমজুর আব্দুর রকিব ( ৫০), একই উপজেলার থানাঘাটা গ্রামের মীর ইদ্রিস আলীর ছেলে কলেজছাত্র মীর শামিম নাহিদ (১৮), তালা উপজেলার আঠারই গ্রামের কলেজ ছাত্রী সারবিনা দীবা (১৯), কলারোয়া উপজেলার হঠাৎগঞ্জ গ্রামের আব্দুল মাজেদের স্ত্রী শাকিলা পারভীন (৩২), এছাড়া একজন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। একজন সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন এবং অপর একজনকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। তবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে সাতজন ঢাকা থেকে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে সাতক্ষীরায় এসেছেন। বাকী দুইজন দিনমজুরের রকিব ও গৃহবধূ শাকিলা তাদের স্ব স্ব এলাকা থেকে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, ইতোমধ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের মাঠ পর্যায়ে যে সমস্ত কর্মী আছে আমরা তাদেরকেও সচেতনতামূলক প্রচারের নির্দেশ দিয়েছি।

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজার সিভিল সার্জনের কার্যালয়, সদর হাসপাতাল এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) তথ্যমতে জেলায় এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১১ জন। এদের মধ্যে দুইজন মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে, দুইজন মৌলভী পলি ক্লিনিকে এবং দুজন সিলেটে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকি দুইজন সদর হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বলে নিশ্চিত করেছে মৌলভীবাজার জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়।

এছাড়া শনিবার আরও নতুন দুইজন ও রবিবারে একজনের ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। তবে তাদের শারিক অবস্থা ভালো রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

জানা যায়, মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া চারজনের মধ্যে দুইজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য সদর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের চতুর্থতলায় আলাদা ডেঙ্গু কর্নার চালু করা হয়েছে।

এ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন মৌলভীবাজার পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের কম্পিউটার বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রহমান আলী খান ও সদর উপজেলার বর্ষিজোড়া এলাকার হেলু মিয়ার পুত্র মারাজ মিয়া (৩৫)।

মৌলভীবাজার পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের কম্পিউটার বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রহমান আলী খান জানান, তার পাশের একজন শিক্ষার্থী ঢাকা থেকে হোস্টেলে ফেরার পরপরই তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। গত চারদিন যাবত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সিলেট: সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত সিলেটে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন সাতজন। এর মধ্যে চারজন পুরোদমে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও তিনজন রয়েছেন সন্দেহভাজনের তালিকায়। এই সাতজনই সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্নারে চিকিৎসাধীন আছেন। এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে মানুষ বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নুরে আলম শামীম বলেন, অন্যান্য স্থানে ডেঙ্গু রোগীর পরিমাণ যেভাবে বাড়ছে সিলেটে সেই আশঙ্কা নেই। কারণ সিলেটে এখনো ডেঙ্গুর লাভা পাওয়া যায়নি।

কেশবপুর (যশোর): কেশবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ দিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে ৫৬০ জন নারী পুরুষ ও শিশু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। জ্বরে আক্রান্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় ১১ জনকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে দুইজনের ডেঙ্গু শনাক্ত করা হয়েছে।

এরমধ্যে উপজেলার কোমরপোল গ্রামের আবুল কালামের মেয়ে সাড়ে ৪ বছরের শিশু ফারিয়া ২৬ জুলাই এবং আলতাপোল গ্রামের মাসুদের মেয়ে সুরাইয়া ২৭ জুলাই ভর্তি হন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আহসানুল মিজান রুমি বলেন, এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন ৩শ’ ৫০ থেকে ৪শ’ রোগী বহি:বিভাগে চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকে। এরমধ্যে শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন।

ইত্তেফাক

Scroll to Top