মিন্নির বিচারের দাবিতে বাদী দুলাল শরীফের মানববন্ধন

রিফাত শরীফ হত্যা মামলার বাদী দুলাল শরীফ রবিবার বরগুনা প্রেসক্লাব চত্বরে মানবন্ধন করেছেন। তার আত্মীয় স্বজনসহ ৫০-৬০ জন লোক এ মানববন্ধনে অংশ নেয়। মানববন্ধনে মিন্নির ও মিন্নির বাবা-মায়ের শাস্তির দাবি করা হয়। রিফাত হত্যায় জড়িত সব আসামিকে দ্রুত বিচাররের আওতায় এনে তাদের ফাঁসির দাবি করা হয়।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দুলাল শরীফ বলেন, \’আমার ছেলে রিফাত শরীফের সঙ্গে মিন্নির বিয়ের সময় মিন্নি ও নয়নের পূর্ব বিয়ের তথ্য গোপন করেছেন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন ও তার মা। এজন্য আমি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবো।\’

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন নিহত রিফাতের মা ডেইজি বেগম, একমাত্র বোন ইসরাত জাহান মৌ, চাচা আবদুল লতিফ শরীফ, আবদুল আজীজ শরীফ ও চাচাতো বোনরা।

সমাবেশে দুলাল শরীফ বলেন, ‌\’কিছু মানুষ প্রকৃত তথ্য না জেনে ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে মিন্নির পক্ষে লেখালেখি করছেন। তাদের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা প্রকৃত সত্য জেনে তারপর লেখালেখি করুন। এসব লেখালেখির কারণে আমার ছেলে হত্যার বিচার প্রভাবিত হতে পারে।\’

মিন্নিকে আইনি সহায়তা দিতে আসা আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, \’প্রত্যেক অভিযুক্তের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। মিন্নির পক্ষে যেসব আইনজীবী আজ আদালতে উঠেছেন তাদের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা নিজেরা রিফাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অনুসন্ধান করুন। যদি এ হত্যাকাণ্ডে মিন্নি জড়িত না থাকে তাহলে তাকে আইনী সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। কিন্তু সে যদি জড়িত থাকে তাকে আইনী সহায়তা না দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।\’

মানববন্ধন শেষে বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে দুলাল শরীফ বলেন, \’নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির বিয়ে হওয়ার পরও তার পরিবার সেই তথ্য গোপন করে আমার ছেলের সঙ্গে মিন্নির বিয়ে দেয়। মূলত এ কারণেই আমার ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করে নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা। এ হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে মিন্নিও জড়িত।\’

এদিকে বরগুনা প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন এবং প্রেসক্লাবে সংবাদ মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফের আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, \’নয়নের সঙ্গে মিন্নির কোন বিয়েই হয়নি। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একটি খাতায় মিন্নির স্বাক্ষর নিয়েছে নয়ন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী।এটাই কি বিয়ের নমুনা। নিহতের বাবা দুলাল শরীফ আসামি পক্ষের প্রভাবশালী রাজনীতিকদের হাতের ক্রিড়নক হয়ে পড়েছেন। তাছাড়া রয়েছে মোটা অঙ্কের টাকার প্রলোভন। তার কথাবার্তা ও কার্যকলাপে প্রতীয়মান হয় যে, সন্তান হত্যার বিচার তিনি চান না। তিনি চান মিন্নির বিচার। দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার বাদী এখন স্বপক্ষত্যাগকারী। বাদী যেখানে মামলা প্রমাণের জন্য স্বাক্ষীদের ওপর নির্ভরশীল, দুলাল শরীফ সেখানে প্রত্যক্ষদর্শী প্রধান স্বাক্ষী মিন্নিকে খুনিদের দলে সামিল করেছেন।\’

মোজাম্মেল হোসেন দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘আমি এখনও বলছি, লক্ষ কোটিবার বলবো, আমার মেয়ে মিন্নি নির্দোষ। সে তার স্বামীর খুনের সঙ্গে কোনক্রমেই জড়িত থাকতে পারে না’। কিছু মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য এবং সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত মিন্নির কয়েক সেকেন্ডের চলাফেরাকে ভিত্তি করে, ইচ্ছাকৃতভাবে পুলিশ আসামি পক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমার মেয়েকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।\’

পুলিশ সুপার মারুফ হোসেনের কাছে মিন্নির বাবা জানতে চান, \’পুলিশ নিয়ন্ত্রিত সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজ কিভাবে ভাইরাল হয়ে গেলো?

গত শুক্রবার ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দী প্রদানের পর জেলগেটে মিন্নির সঙ্গে স্বজনরা দেখা করতে গেলে তাকে বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত দেখা যায় বলে জানান মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। এ সময় মিন্নি বারবার বলেন, ‘বাবা আমার ওপর প্রচণ্ড মানসিক চাপ প্রয়োগ করে পুলিশ তাদের মতো করে জবানবন্দী দেওয়ালো’।

মিন্নির বাবা কিশোর সবার কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘এমপি পূত্র এ্যাড. সুনাম দেবনাথ দুলাল শরীফের পক্ষ অবলম্বন করে কেন মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজক হিসেবে কাজ করছেন রিফাতের বাবা?’

Scroll to Top