টুর্নামেন্টে সেরাদের তালিকায় বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের নাম থাকার পরও শেষ পর্যন্ত ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার জিতেছেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়মসন। ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক নাসের হুসেইন ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের নাম ঘোষণা করার সময় জানান, ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের জন্য ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ কমিটি, উইলিয়ামসন ছাড়াও বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান, ভারতের রোহিত শর্মা এবং অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্কের নামও বিবেচনা করেছিল। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় উইলিয়ামসনের ওপরে ছিলেন রোহিত শর্মা, অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার এবং সাকিব আল হাসান। মূলত বেশ কয়েকবার নিউজিল্যান্ডকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেই এই রান করেন বলে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার ওঠে তাঁর হাতে। নিউজিল্যান্ডের হয়ে আলোচিত চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন উইলিয়ামসন।
বাংলাদেশের ক্রিকেট-ভক্তদের মধ্যে অবশ্য আগে থেকেই এক ধরনের একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল যে, সাকিব আল হাসান ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার পাবেন। বাংলাদেশি ক্রিকেট ভক্তদের এই প্রত্যাশার কথা উঠে এসেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এই প্রত্যাশা তৈরি হওয়ার একটি কারণ ছিল আইসিসির ফ্যান্টাসি লিগ। ফ্যান্টাসি লিগে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট নিয়ে বরাবরই শীর্ষ স্থানটি সাকিবের দখলেই ছিল। টেলিভিশন সম্প্রচারকরা এবং বিশ্লেষকরা ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের আলোচনাতেও সাকিবকে সবার ওপরে রেখেছেন। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে শেষ পর্যন্ত ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার পেলেন উইলিয়ামসন।
কেন উইলিয়ামসনের ব্যাটিং ও অধিনায়কত্ব
১০ ম্যাচ খেলে ৫৭৮ রান সংগ্রহ করেন কেন উইলিয়ামসন, যা এই বিশ্বকাপের চতুর্থ সর্বোচ্চ। নিউজিল্যান্ড এই টুর্নামেন্ট শুরু করে দুর্দান্তভাবে টানা তিন ম্যাচ জেতে। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০ উইকেটে জয় ছাড়া নিউজিল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি উল্লেখযোগ্য রান করতে পারেনি। ব্যাট হাতে নিউজিল্যান্ডের ত্রাতার ভূমিকায় ছিলেন কেন উইলিয়ামসন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭৯, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০৬ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৪৮ রান তোলেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক। মূলত প্রথম পাঁচ ম্যাচের জয়ই নিউজিল্যান্ডকে সেমিফাইনালে উঠতে সাহায্য করে। সেমিফাইনালেও ভারতের বিপক্ষে ৬৭ রানের একটি ইনিংস খেলেন, যা পরবর্তী সময়ে ম্যাচ জেতাতে সাহায্য করে। ফাইনাল ম্যাচে ৩০ রানে আউট হন উইলিয়ামসন।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮০ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর হাল ধরেন উইলিয়ামসন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও ৭ রানে ২ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড, এদিনও উইলিয়ামসন এসে ইনিংস মেরামতের কাজ করেন। ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালেও ফিফটিসহ, ২৪০ রানের পুঁজি নিয়ে লড়াই করতে দারুণভাবে দলকে উজ্জীবিত করেন তিনি।
উইলিয়ামসনের অধিনায়কত্বের প্রশংসা শোনা গিয়েছে টুর্নামেন্ট জুড়ে। বিশেষত প্রথম তিন ম্যাচ জয়ের পর, যখন কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে নিউজিল্যান্ড তখন দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন উইলিয়ামসন। ব্যাট হাতে নেতৃত্বের পাশাপাশি দল যাতে পরবর্তী ধাপগুলোতে ঠিকঠাক পৌঁছায় সেজন্য কম পুঁজি নিয়েও দারুণ অধিনায়কত্ব করেন উইলিয়ামসন। বাংলাদেশের বিপক্ষে ২ উইকেটের জয়, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪ উইকেটের জয় ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫ রানের জয়ে উইলিয়ামসনের ফিল্ডিং সাজানো ও বোলিং পরিবর্তনে বুদ্ধিমত্তা ও দৃঢ়তার পরিচয় রাখে।
অন্যদিকে সাকিব আল হাসান এই বিশ্বকাপ তো বটেই, ক্রিকেট বিশ্বকাপের ইতিহাসে এযাবত্ অলরাউন্ডারদের মধ্যে সেরা পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। সাকিব মোট আটটি ম্যাচে ব্যাট হাতে মাঠে নামেন। আট ইনিংসে ৬০৬ রান সংগ্রহ করেন সাকিব। তাঁর রানের গড় টুর্নামেন্টে সবার ওপরে ৮৬.৫৭। আট ম্যাচ খেলা সাকিব সাতটি ইনিংসেই ন্যূনতম ৫০ রান করেছেন। এর মধ্যে দুটি শতক রয়েছে। টুর্নামেন্টে তার সর্বনিম্ন রান ৪১। বল হাতে সাকিব আট ম্যাচে নিয়েছেন ১১টি উইকেট। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ৬০০-এর ওপর রান ও ১০টিরও বেশি উইকেট নিয়েছেন সাকিব।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাকিব আল হাসানের দল বাংলাদেশ আট নম্বরে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করে। দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্সই হয়তো সাকিবের টুর্নামেন্ট-সেরা না হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড়ো নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়। ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের একটা উল্লেখযোগ্য বিশেষ দিক হলো ব্যক্তির সাফল্য দলের সাফল্যে কতটা প্রভাব পড়েছে সেটা বিবেচনা। —বিবিসি