ঠাকুরগাঁওয়ে এবার সাংবাদিককে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়েছে পুলিশ, এমন অভিযোগ করেছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। সোমবার রাতে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে সদর থানা পুলিশের একটি দল এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। একটি বেসরকারি টেলিভিশন ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকার ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি রিপন এ ঘটনার শিকার হয়েছেন।
সম্প্রতি পুলিশের বিরুদ্ধে মাদক ও মামলা ‘বাণিজ্য’, তল্লাশির নামে হয়রানি এবং লুটপাটসহ বিভিন্ন অনিয়মের খবর প্রকাশ করায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলে মনে করছেন গণমাধ্যমকর্মীরা।
পুলিশের এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে ঠাকুরগাঁওয়ের গণমাধ্যমকর্মীসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে চলছে তোলপাড়। চরম ক্ষোভ এবং অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ওই সাংবাদিক দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলম সৈনিক হিসাবে অত্যন্ত সোচ্চার। পুলিশ যে ‘অপকর্মটি’ করেছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যার দিকে মোটরসাইকেলের তেলের জন্য শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার রূপসী বাংলা পাম্পে যাচ্ছিলেন গ্রেফতারকৃত সাংবাদিক রিপন ।
এ সময় সদর থানা পুলিশের এসআই সাইফুল, চন্দন, এএসআই আনসোপ, মিজান, সাজেদুর, আক্তারকহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য তার পথরোধ করেন।
এরপর রিপনকে জোরপূর্বক থানায় নিয়ে যাওয়া চেষ্টা করলে প্রতিবাদ করে সে। এসময় উপস্থিত জনতার রোষানলে পরে পুলিশ।
থানায় নেয়ার পরে একজন পুলিশ সদস্যদের চিৎকার করে বলতে শুরু করেন ইয়াবা পাওয়া গেছে স্যার । এ সময় তারা সাংবাদিক রিপন নিয়ে দ্রুত থানায় রওনা দেন। এরপর তাকে ওসির কক্ষে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারপিট করে বলে জানা গেছে।
ঘটনা জানার পর প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্য সাংবাদিকরা থানায় যান।
এ সময় সাংবাদিক রিপন প্রেসক্লাবের সদস্যদের বলেন, আমাকে জোরপূর্বক পুলিশের সদস্যরা থানায় তুলে এনেছেন। আমি ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত একথা স্বীকার করার জন্য ওসি রুমে আমাকে শারীরিক নির্যাতন করেন কয়েকজন।
এরপর পরিকল্পিতভাবে বলছেন, আমার কাছে ইয়াবা পাওয়া গেছে। ইতোপূর্বে অমরা কয়েকজন সংবাদকর্মী সদর থানায় কর্মরত এসআই আনসোপ, মিজান, আক্তার, সাজেদুর, এসআই সাইফুলসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, মামলা দিয়ে নিরীহ মানুষকে ফাঁসানোসহ বিভিন্ন অনিয়মের সংবাদ পরিবেশন করায় আমাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে।
সদর থানার ওসি আশিকুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে বলেন, ফাঁসানোর বিষয়টি ভিত্তিহীন।
ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের সভাপতি মনসুর আলী বলেন, এখন কোন দপ্তরের অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করলে সাংবাদিককে বানোয়াট মামলা ও হুমকি শিকার হতে হয়। এটি সারাদেশের চিত্র এখন।
পুলিশের বিরুদ্ধে লেখেই রিপনকে পরিকল্পিত ভাবে ফাঁসানোর অভিযোগ করেন তিনি। মামলা তুলে না নিলে সাংবাদিক সমাজ আন্দোলনে যাবেন বলে হুশিয়ারি দেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দরা।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সাংবাদিক রিপনকে ১৫০ পিচ ইয়াবাসহ মামলা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়।