নির্বাচন কমিশনের ভোট বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে উঠে আসা ‘অস্বাভাবিক’ ভোটার ও ভয়াবহ অনিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল এবং ওই নির্বাচনে অনিয়ম তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠনের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তির জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন জানিয়েছে বিএনপি। বুধবার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আবেদন জানান।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর ভোটের আগের রাতে গোটা দেশে ব্যালট বাক্স ভর্তি করার দালিলিক প্রমাণ এবার স্বয়ং আওয়ামী লীগের অনুগত ও গভীর আস্থাভাজন নির্বাচন কমিশন নিজেই প্রকাশ করেছে।নির্বাচনের ছয় মাস পরে নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রভিত্তিক যে ফলাফল প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গেছে, কোনো নির্বাচনই হয়নি বাংলাদেশে।
রিজভী বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে আমাদের আবেদন পৃথিবীর ইতিহাসে অকল্পনীয় এই ভয়াবহ ভোট চুরি ও মধ্যরাতের ভোট ডাকাতির একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করুন। উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিশন করে যারা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক অভিভাবক হিসেবে ভোটবঞ্চিত ভোটাররা দ্রুত আপনার সুবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা ৩০ জুন দায় স্বীকার করে বলেছেন, শতভাগ ভোট পড়া কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়।
বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে রিজভী বলেন, ৩শ\’টি আসনে ৪০ হাজার ১৫৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১০৩টি আসনের ২১৩টি ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে, ৯৯ শতাংশ ভোট পড়েছে ৩৫৮টি কেন্দ্রে, ৯৬ শতাংশ ভোট পড়েছে ৫১৬টি কেন্দ্রে। অর্থাৎ ১৪১৮টি ভোটকেন্দ্রে ৯৬ শতাংশ থেকে ১শ শতাংশ ভোট পড়েছে। মূলত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৩শ\’টি আসনেই ভোট জালিয়াতি ছিল নজিরবিহীন ও বিস্ময়কর। সুজন সিইসিসহ সংশ্লিষ্টদের দায়ী করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি জানিয়েছে। আমরা মনে করি এই দাবি যথার্থ। মূলত: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৩০০টি আসনেই ভোট জালিয়াতি ছিল নজিরবিহীন ও বিস্ময়কর।
খালেদা জিয়াকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য সরকার নীলনকশা তৈরি করেছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, তাকে মিথ্যা মামলায় দেড় বছর বন্দি রাখা হয়েছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ। তার জামিনে এখন সরাসরি বাধা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আদালতে হস্তক্ষেপ করার পাশাপাশি দেশনেত্রীর আইনজীবীদেরও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার ওকালতনামায় স্বাক্ষর করতে দেওয়া হচ্ছে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে একজন নাগরিক হিসেবে সংবিধান প্রদত্ত আইনগত অধিকার থেকেও তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এর থেকে জুলুম আর কী হতে পারে? এখানেই প্রমাণ হয়, কর্তৃত্ববাদী সরকারের হাতের মুঠোয় থাকে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান।
গ্যাসের বাড়তি দাম প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, উন্নয়নের কথা বলে জনগণের পকেট কেটে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন আর ভোট ডাকাতিতে সহযোগীদের পকেট ভারি করা হচ্ছে। সবাই জানে, গ্যাসে এই মুহূর্তে কোনো ভর্তুকি নেই। এই গ্যাসের মূল্য এলএনজি আমদানি করে তার ভর্তুকি দেওয়ার জন্য বাড়ানো হয়েছে। সরকারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত মন্ত্রী, উপদেষ্টা এবং তাদের অত্যন্ত প্রিয়ভাজন এলএনজি আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের বাড়তি খরচ মেটাতে জনগণের ঘাড়ে গ্যাসের দাম চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এলএনজি ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে সাধারণ ভোক্তাদেরকেকেন বাড়তি দাম দিতে হবে? আমরা সরকারকে বলব, কোনো অজুহাত দেখাবেন না, গ্যাসের দাম কমান। গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। জনগণ ক্ষোভে ফুঁসছে।
সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, প্রচার সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।