জয় শ্রীরাম’ স্লোগানটি মানুষ প্রহার করার জন্য আমদানি করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। টেনে এনেছিলেন বিভেদের রাজনীতির প্রসঙ্গও। সেইসঙ্গে বলেছিলেন, এটি বাংলার সংস্কৃতি নয়। আর তাতেই পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা প্রবল ক্ষিপ্ত হয়েছেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, বিদেশ থেকে রাজ্যে এসে ‘জ্ঞান’ দিয়ে যান অমর্ত্য সেন। তার মতামতের কোনও ‘গুরুত্ব’ নেই।
বিজেপির এক রাজ্য নেতা সরাসরি অমর্ত্য সেনের ইতিহাস চেতনা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। আসলে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে শাসকবিরোধী টিপ্পনীর কেন্দ্রে আপাতত ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি। তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে শক্ত লড়াই ও ভোট মেরুকরণের লক্ষ্যে বিজেপি রাজ্যে এখন ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান ব্যবহার করছে।
এর প্রতিবাদে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করেছে, বিভেদ তৈরিতেই এসব করা হচ্ছে।
অমর্ত্য সেনের কথাতে একই প্রতিফলন ঘটেছে। ফলে বিজেপি নেতারা কটাক্ষ করতেও দ্বিধা করছেন না। বিজেপির সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেছেন, উনি (অমর্ত্য সেন) বিদেশে থাকেন। রাজ্যে কী ঘটছে, সে বিষয়ে তার কোনও ধারণা নেই। এখানকার মানুষের জীবনের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। দায়-দায়িত্বও নেই। উনি এখানে এসে কী জ্ঞান দিয়ে গেলেন, তাতে কিছু যায় আসে না। সেইসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতির মন্তব্য, অমর্ত্যবাবুকে যারা পরামর্শ দেন, তারা এখন অপ্রাসঙ্গিক।
দিলীপ ঘোষের সুরে বিজেপির জাতীং কর্মসমিতির সদস্য মুকুল রায় বলেছেন, উনি এত বড় মাপের মানুষ যে বিদেশ থেকে বিমানবন্দরে পৌঁছে পাইলট গাড়িসহ কলকাতায় ঘুরে বেড়ান। ফলে সাধারণ মানুষের কথা উনি জানতেও পারেন না। শুনতে পান না তাদের ভাষা। রাম রাজ্য কোনও নতুন ভাবনা নয়।
একইভাবে স্যোস্যাল মিডিয়ায় অমর্ত্য সেনকে আক্রমণ করেছেন আসানসোলের সাংসদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের বয়সকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বাবুল লিখেছেন, বয়সজনিত কারণেই জয় শ্রীরামের মানে বুঝতে পারছেন না উনি। বাবুলের কথায়, তার বয়স কথা বলছে, মস্তিষ্ক বা অন্য কিছু নয়। সেই কারণেই জয় শ্রীরামের মানে বুঝতে পারেননি উনি।
মন্ত্রী দাবি করেছেন, বাংলায় জয় শ্রীরাম প্রতীকী প্রতিবাদের ধ্বনি, এর সঙ্গে ধর্মের যোগ নেই। তিনি বলেছেন, জয় শ্রীরাম ধ্বনি অবশ্যই মানুষকে প্রহারের জন্য ব্যবহার অনুচিত। বরং এই ধ্বনি ব্যবহার হচ্ছে অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর লড়াই হিসাবে।
এদিকে, অমর্ত্য সেনের সমালোচনায় যেভাবে বিজেপি নেতারা সোচ্চার হয়েছেন তার প্রতিবাদ জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, স্পর্ধায় ওদের শালীনতা জ্ঞান লোপ পেয়েছে। ফিরহাদ বলেন, দিলীপবাবুদের কথাকে যত কম গুরুত্ব দেয়া যায়, ততই ভাল। রাজ্যের সংস্কৃতি নিয়ে দিলীপ বাবুদেরই কোনও জ্ঞান নেই। এরপর তারা রাজ্যের অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরও হয়তো অস্বীকার করতে শুরু করবেন। বিজেপি অবশ্য এই প্রথম অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন তা নয়। এর আগে নোটবন্দির সমালোচনা করায় প্রায় একই কায়দায় অমর্ত্য সেনের অর্থনীতির জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিজেপি নেতারা।