সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৬৯ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে জমার পরিমাণ বেড়েছে এক হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের তথ্য গোপনের আইন অনেক কড়াকড়ি। বর্তমানে সুইজারল্যান্ডে ২৪৮টি ব্যাংক রয়েছে। গ্রাহকের নাম-পরিচয় গোপন রাখতে কঠোর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ফলে ধারণা করা হয়, বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের অবৈধ আয় ও কর ফাঁকি দিয়ে জমানো অর্থ এখানে রাখা নিরাপদ। তবে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক চাপে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু কিছু তথ্য প্রকাশ করছে। তবে একক অ্যাকাউন্টের তথ্য প্রকাশ করা হয় না।
সর্বশেষ ২৭ জুন এসএনবির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশিদের আমানত দাঁড়িয়েছে ৬১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা দেশি মুদ্রায় ৫ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা (প্রতি ফ্রাঁ ৮৬ দশমিক ৪১ টাকা ধরে)। এক বছর আগে এ অঙ্ক ছিল ৪৮ কোটি ১৩ লাখ ফ্রাঁ বা ৪ হাজার কোটি টাকা।
সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নাগরিকত্ব গোপন রেখেছে এমন বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থ এই হিসাবের মধ্য রাখা হয়নি। গচ্ছিত সোনা কিংবা মূল্যবান সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমানও এ হিসাবের বাইরে রাখা হয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ সাল পর্যন্ত টানা ৬ বছর সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত বাড়ে। ২০১৭ সালে খানিকটা কমলেও এবার আবার বেড়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিআইএফইউ) প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের আমানত বেড়েছে। কিন্তু এ আমানতের সব অর্থই যে অবৈধভাবে গেছে, তা বলা যাবে না। অবৈধ টাকার বিষয়ে আমরা তদন্ত করি, যদি কোনো তথ্যের প্রয়োজন হয় তাহলে এগমন্ট গ্রুপের সদস্য হিসেবে আমরা ওই দেশে চিঠি লিখি। তখন বিভিন্ন তথ্য দিয়ে তারা আমাদের সহযোগিতা করে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখবো।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) ‘২০০৬-১৫ সালের উন্নয়নশীল দেশ থেকে অবৈধভাবে অর্থ পাচার’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে ২০১৫ সালে ৫৯১ কোটি ৮০ লাখ ডলার পাচার হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৫০ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। ২০০৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এক দশকে সর্বমোট পাচার হয়েছে ৬ হাজার ৩২৮ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। আমদানি-রফতানির আড়ালে ব্যাংকের মাধ্যমে বেশিরভাগ অর্থ পাচার হয়েছে।
লেটেস্টবিডিনিউজ/এনপিবি