বেশ কিছুদিন ধরে তিনি ছিলেন আইসিসি টি-টোয়েন্টি অলরাউন্ডারদের র্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থানে। তবু সংশয় ছিলো তার ব্যাটিং সামর্থ্য নিয়ে। কেননা ওয়ানডে ক্রিকেটে ৪ ফিফটি ব্যতীত তিন ফরম্যাট মিলেও নেই বলার মতো কোনো বড় সংগ্রহ। যেখানে তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি ৬০ রানের।
ফলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করার স্বপ্নটা এতদিন ধরে স্বপ্নই ছিলো আফগানিস্তানের তরুণ লেগস্পিনার রশিদ খানের। তবে আজ (মঙ্গলবার) বিশ্বকাপের মঞ্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি সেঞ্চুরি করেছেন একটি ঠিকই, কিন্তু এ সেঞ্চুরিতে কৃতিত্ব নেয়ার কোনো সুযোগই নেই তার সামনে।
কেননা তার এ সেঞ্চুরিটি হয়েছে বল হাতে, ব্যাট হাতে নয়। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যানের বেধড়ক পিটুনিতে মাত্র ৯ ওভার বল করে ১১০ রান খরচ করেছেন এ আফগান তরুণ লেগস্পিনার। তাতে গড়ে ফেলেছেন লজ্জার এক রেকর্ড।
ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে চলতি বিশ্বকাপের দলীয় সর্বোচ্চ ৩৯৭ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। ইনিংসে নিজের পূর্ণ ১০ ওভারের কোটা শেষ করতে পারেননি রশিদ।
ইনিংসের ১৯তম ওভারে আসেন প্রথমবারের মতো বোলিংয়ে, নিজের শেষ ওভারটি করেন ইনিংসের ৪৯তম ওভারে। তবু করতে পারেনি পুরো ১০ ওভার। অবশ্য পারবেনই বা কী করে? রশিদকে বোলিংয়ে পেলেই যে তেতে উঠেছিল ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা।
তাই তো ২০ বছর বয়সী এ লেগস্পিনারের ৯ ওভারের স্পেলে রান এসেছে ১১০টি। এই ৫৪ বলের মধ্যে ১৮টি ডট বল করলেও, বাকি ৩৬ বলে হজম করেছেন ১১টি ছক্কা ও ৩টি চার। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক ইনিংসে তার চেয়ে বেশি রান খরচ করেননি আর কোনো বোলার।
রশিদের ওপর সবচেয়ে বেশি ঝড় চালিয়েছেন ইংলিশ অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যান। মোট ১১টি ছক্কার মধ্যে ৭টিই এসেছে মরগ্যানের ব্যাট থেকে। এছাড়া মঈন আলি ২ এবং জো রুট ও জনি বেয়ারস্টো হাঁকিয়েছেন ১টি করে ছক্কা।
ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ১১ ছক্কা হজম করা বোলারটিও রশিদ খান। মর্গান রশিদের বলে ৭ ছক্কা মেরেছেন। ওয়ানডে ইতিহাসে এক বোলারকে এক ব্যাটসম্যানের বেশি ছক্কা মারার ঘটনাও হল এটি।
এতদিন ধরে বিশ্বকাপে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান খরচের রেকর্ডটি ছিল নিউজিল্যান্ডের পেসার মার্টিন স্নেডেনের নামের পাশে। ১৯৮৩ সালে ৬০ ওভারের বিশ্বকাপের আমলে তিনি ১২ ওভারে খরচ করেছিলেন ১০৫ রান। সেখানে ছিলো একটি মেইডেন ওভারও।
স্নেডেনের এ লজ্জার রেকর্ড নিজের করে নিতে রশিদ খানের বোলিং করতে হয়েছে মাত্র ৯ ওভার। তাতেই ছাড়িয়ে গেছেন সবাইকে। রশিদ খানের আগে বিশ্বকাপে এক ইনিংসে শতরানের বেশি খরচ করার নজির ছিলো তিনজন বোলারের।
এছাড়া সবধরনের ওয়ানডে ক্রিকেটে অল্পের জন্য লজ্জার বিশ্বরেকর্ড থেকে বেঁচে গিয়েছেন রশিদ। ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ান পেসার মাইক লুইস ১০ ওভারে খরচ করেছিলেন ১১৩ রান। যেটি এখনও রয়ে গেছে ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান খরচের তালিকার শীর্ষে।
বিশ্বকাপে এক ইনিংস সবচেয়ে বাজে বোলিংয়ের তালিকা
১. রশিদ খান (আফগানিস্তান): ৯-০-১১০-০, বনাম ইংল্যান্ড (২০১৯)
২. মার্টিন স্নেডেন (নিউজিল্যান্ড): ১২-১-১০৫-২, বনাম ইংল্যান্ড (১৯৮৩)
৩. জেসন হোল্ডার (ওয়েস্ট ইন্ডিজ): ১০-২-১০৪-১, বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা (২০১৫)
৪. দাওলাত জাদরান (আফগানিস্তান): ১০-১-১০১-২, বনাম অস্ট্রেলিয়া (২০১৫)
৫. অশান্তা ডি মেল (শ্রীলঙ্কা): ১০-০-৯৭-১, বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ (১৯৮৭)
লেটেস্টবিডিনিউজ/এনপিবি