পাকিস্তানের লেজদের প্রতিরোধ ভেঙ্গে দুর্দান্ত জয় অস্ট্রেলিয়ার

একেই বলে আনপ্রিডেক্টেবল। ২ উইকেটে ১৩৫ রান তুলে ফেলেছিল পাকিস্তান। এতে ভালোভাবেই খেলায় ছিল দলটি। তবে ক্ষণিকের ঝড়ে সব এলোমেলো। ২৪ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে পথ হারায় তারা। তাতে জয়ের পথ শক্ত হয় অস্ট্রেলিয়ায়।

হাসান আলি ও ওয়াহাব রিয়াজকে নিয়ে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। হাসান আলী ও ওয়াহাব রিয়াজের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি পাকিস্তান। ২৬৬ রানে অলআউট হলে ৪১ রানে হারে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।

৩০৮ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা শুভ হয়নি পাকিস্তানের। দলীয় ২ রানে প্যাট কামিন্সের বলে থার্ড ম্যানে কেন রিচার্ডসনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ফখর জামান। এরপর আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজায় অস্ট্রেলিয়া। এ অবস্থায় বাবর আজমকে নিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন ইমাম উল হক। ভালোই খেলছিলেন তারা। কিন্তু হঠাৎই ছন্দপতন। কোল্টার নাইলের শিকার হয়ে হয়ে ফেরেন বাবর।

দ্রুত সাজঘরে ফেরেন ফখর। ক্রিজে সেট হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি বাবর। একই দশা ইমামের। ক্যারিয়ারে ষষ্ঠ ফিফটি তুলেই ফেরেন তিনি। ব্যক্তিগত ৫৩ রানে কামিন্সের বলে অ্যালেক্স ক্যারিকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাঁহাতি ওপেনার। এর আগে মোহাম্মদ হাফিজের সঙ্গে ৮০ রানের জুটি গড়েন ইমাম।
\"\"

ততক্ষণ পর্যন্ত খেলায় ছিল পাকিস্তান। তবে সঙ্গী হারিয়ে ক্রিজে মন টেকেনি হাফিজের। অ্যারন ফিঞ্চের ফুলটস বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে গিয়ে মিচেল স্টার্কের হাতে ধরা পড়েন তিনি। মাত্র ৪ রানের জন্য হাফসেঞ্চুরি বঞ্চিত হন মিস্টার প্রফেসর।

এতে চাপে পড়ে পাকিস্তানে। সেই পরিস্থিতিতে আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি অভিজ্ঞ শোয়েব মালিক। কামিন্সের তৃতীয় শিকার হয়ে ক্যারির গ্লাভসবন্দি হয়ে ফেরেন তিনি। এতে খেলা থেকে ছিটকে যায় পাকিস্তান। লড়াইটা করতে পারেননি আসিফ আলিও। রিচার্ডসনের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরেন তিনি। ফলে ধ্বংস্তূপে পরিণত হয় পাকিস্তান।

এর আগে শুরুটা দুর্দান্ত করে অস্ট্রেলিয়া। মাঝপথেও ছড়ি ঘোরান অজি ব্যাটসম্যানরা। রীতিমতো রানের ফোয়ারা ছোটান। তবে শেষদিকে সেটা অব্যাহত রাখতে পারেননি তারা। ফলে দলীয় স্কোর বোর্ডে যতটা রান ওঠার কথা, ততটা উঠলো না। আমির, হাসান, রিয়াজ, আফ্রিদিদের দুরন্ত বোলিংয়ে ৩০৭ রানে গুটিয়ে যান অজিরা।

বুধবার টনটনে বৃষ্টি আবহ ও বাতায় থাকায় টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেন পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। যদিও এখনো বৃষ্টি নামেনি। তবে শুরুতে পেসাররা তার সিদ্ধান্তকে স্বার্থক করতে পারেননি। তাদের ব্যর্থ করে অস্ট্রেলিয়াকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন অ্যারন ফিঞ্চ ও ডেভিড ওয়ার্নার। অবিচ্ছিন্ন ওপেনিং জুটিতে ১৪৬ রান তোলেন তারা।
\"\"

ফিফটি তুলে সেঞ্চুরির পথে হাঁটছিলেন ফিঞ্চ। তবে তাতে বাদ সাধেন মোহাম্মদ আমির। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেই অজি অধিনায়ককে ফেরান তিনি। ফেরার আগে ৮৪ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৮২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন ফিঞ্চ।

তিনি ফেরার পর ক্রিজে স্থায়ী হতে পারেননি স্টিভ স্মিথ। মোহাম্মদ হাফিজের বলে আসিফ আলিকে ক্যাচ তুলে দেন নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা এ ব্যাটসম্যান। তবে স্বরূপে ছিলেন ওয়ার্নার। নির্বাসন কাটিয়ে ফিরে ফর্মের মগডালে আছেন তিনি। বিশ্বকাপের আগে মাতিয়ে এসেছেন আইপিএল। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টেও সেই ফর্ম ধরে রেখেছেন বিধ্বংসী ওপেনার। পথিমধ্যে আসরে তৃতীয় ফিফটি তুলে নেন তিনি। দোর্দণ্ড প্রতাপে এগিয়ে যান সেঞ্চুরির পথে। এরই মাঝে শাহীন আফ্রিদির বলে সোজা বোল্ড হয়ে ফেরেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।

তবে পথচ্যুত হননি ওয়ার্নার। শাহীন আফ্রিদিকে বাউন্ডারি মেরে তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন তিনি। তুলে নেন অনবদ্য সেঞ্চুরি। বিশ্বকাপে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। সব মিলিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে বিস্ফোরক ওপেনারের ১৫তম তিন অংক ছোঁয়া ইনিংস।

অবশ্য কাঙ্ক্ষিত ঘর স্পর্শ করার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ওয়ার্নার। ব্যক্তিগত স্কোরে আর ৭ রান করেই আফ্রিদির দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন ওয়ার্নার। ফেরার আগে ১১১ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় ১০৭ রানের ঝলমলে ইনিংসটি সাজান তিনি। ততক্ষণে বিশাল সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।

তবে যতটা ভাবা হয়েছিল শেষ অবধি তা হয়নি। সেটা হতে দেননি মূলত আমির। দীর্ঘদিন অফফর্মে থাকলেও বিশ্বকাপে দারুণ ছন্দে আছেন তিনি। ব্যাটিং স্বর্গে স্বরূপে ছিলেন তিনি। ওয়ার্নার ফেরার পর নিজের দ্বিতীয় শিকার বানিয়ে ফেরান উসমান খাজাকে। ওয়াহাব রিয়াজের তালুবন্দি করে তাকে ফেরান বাঁহাতি পেসার। সেই রেশ না কাটতেই শোয়েব মালিকের ক্যাচ বানিয়ে শন মার্শকে ফেরান তিনি।

এরপরই পথ হারায় অস্ট্রেলিয়া। কেউই দাঁড়াতে পারেননি। কোল্টার নাইলকে তুলে নিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের চেপে ধরেন রিয়াজ। তাতে প্যাট কামিন্সকে ফিরিয়ে তাতে সমর্থন জোগান হাসান। পরে আমির তোপ চলতেই থাকে। অ্যালেক্স ক্যারি ও মিচেল স্টার্ককে ফিরিয়ে ৪৯ ওভারেই প্রতিপক্ষকে গুটিয়ে দেন তিনি।

সব মিলিয়ে এ ম্যাচে ৫ উইকেট শিকার করেন আমির। এ নিয়ে বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী বনে গেছেন তিনি। ১০ উইকেট নিয়ে সবার ওপর এ গতিতারকা। ৮ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন নিউজিল্যান্ডের লোকি ফার্গুসন। আর ৬ উইকেট নিয়ে তৃতীয় অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক।

লেটেস্টবিডিনিউজ/এনপিবি

Scroll to Top