সাউদাম্পটনের যে উইকেটে যুজবেন্দ্র চাহাল আর জাসপ্রিত বুমরার তোপে দিশেহারা হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা ঠিক সেখানেই বুধবার ব্যাট হাতে ছড়ি ঘোরালেন রোহিত শর্মা। শুধু তাই নয় দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিও সমর্থকদের দিলেন উপহার। শেষ পর্যন্ত তার নৈপুণ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে দ্বাদশ বিশ্বকাপে শুভ সূচনা করল ভারত।
বুধবার টস হেরে আগে বল হাতে নিয়ে চাহেলের ঘূর্ণিতে (৪/৫১) নির্ধারিত ৫০ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার ৯ উইকেটে তুলে নিয়ে ২২৭ রানে আটকে দেয় ভারত। বুমরা নেন ৩৫ রানে ২টি উইকেট। ভুবনেশ্বর কুমার দখল করেন ৪৪ রানে ২ উইকেট। সহজ লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতে শেখর ধাওয়ানকে হারালেও ভারতকে পথ হারাতে দেননি রোহিত। শেষ পর্যন্ত এ ডানহাতি এক প্রান্ত আগলে রেখে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি (১৪৪ বলে ১২২*) তুলে নিয়ে ভারতকে ১৫ বল আগেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন। এর ফলে চলতি বিশ্বকাপে টানা তিনটি হারের সম্মুখীন হল প্রোটিয়ারা। তাতে বিশ্বকাপের পরের রাউন্ডে ওঠাও দলটির জন্য একরকম অনিশ্চিতই হয়ে গেল।
এবারের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের পিচে রান উৎসব হওয়ার কথা। অবশ্য কিছু কিছু ম্যাচে এর উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। বুধবার দিনের প্রথম ম্যাচে চাহাল ও বুমরার তোপে সেটায় দেখা গেল। সে সুবিধা নিয়েই দ্বাদশ বিশ্বকাপের শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছে ভারতের।
সহজ লক্ষ্য তাড়ায় বুধবার ষষ্ঠ ওভারে কাগিসো রাবাদার করা প্রথম বলেই শেখর ধাওয়ানকে হারায় ভারত। তার আগে এ বাঁহাতি করেন ১২ ৮ রান। পরে বিরাট কোহলিও বেশিক্ষণ ২২ গজে থাকতে পারেননি। ১৬তম ওভারে করা আন্দিলে ফিকোয়াওয়ের তৃতীয় বলে উইকেটের পেছনে কুইন্টন ডি ককের হাতে ধরে পড়েন ভারত অধিনায়ক (১৮)। সে সময় প্রোটিয়া কিছু সময়ের জন্য জয়ের স্বপ্নও বুনেছিল। যদিও অন্য প্রান্তে থাকা রোহিত শর্মা দলটির সে স্বপ্ন দ্রুত সময়ের মধ্যে ভেঙে দেন লোকেশ রাহুলকে নিয়ে ৮৫ রানের জুটি গড়ে। এরপরই অবশ্য রাহুলকে ব্যক্তিগত ২৬ রানে রাবাদা ফিরিয়ে দেন।
রাহুল ফিরলেও রোহিত শর্মা এক প্রান্ত ছিলেন তার মতই। দারুণ সব শটে রান বাড়ানোর সঙ্গে দলের জয়টাও এনে দেন কাছে। সে সময় তাকে দারুণ সঙ্গ দেন মহেন্দ্র সিং ধোনি (৩৪)। এরমধ্যেই রোহিত ১২৮ বলে ১০ চার ও ২ ছয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ। এরপর তিনি আরও দাপুটে ব্যাটিং করেন। শেষ পর্যন্ত তার ব্যাটে ভর করেই ভারত জিতে যায় বল আগেই উইকেট হাতে রেখে। রোহিত অপরাজিত ছিলেন ১৪৪ বলে ১৩ চার ও ২ ছয়ে ১২২ রান।
এরআগে দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার হাশিম আমলা ও কুইন্টন ডি কককে দ্রুতই ফিরিয়ে দেন জাসপ্রীত বুমরা। তবে তৃতীয় উইকেটে ফন ডার ডুসেনকে নিয়ে কিছুটা প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন ডু-প্লেসি। কিন্তু তিনি ৩৮ রানের বেশি করতে পারেননি। ফরোয়ার্ড খেলতে গিয়ে ব্যাট আর প্যাডের মাঝখান দিয়ে পরাভূত হয়ে বোল্ড হন চাহালের বলে। তার আগে একই বোলারকে উইকেট বিলিয়ে দেন ডুসেন। চাহালকে এ ডানহাতি খুব বাজে সময়ে রিভার্স সুইপ করতে গিয়েছিলেন। বোল্ড হয় তাই। আউট হওয়ার আগে ২২ রান করেছিলেন প্রোটিয়া এ তরুণ ব্যাটসম্যান।
দলের বিপর্যয়ে বুধবার নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি জেপি ডুমিনি। তিনি শিকার কুলদীপ যাদবের। বাতাসে কিছুটা জোরের ওর ছাড়া বলটি সোজা গিয়ে আঘাত করে ডুমিনির প্যাডে। এলবিডব্লু। সে সময় প্রোটিয়ারে ৮৯ রানেই নেই ৫ উইকেট। স্বাভাবিকভাবেই দিশেহারা দলটি। সেখান থেকে অবশ্য প্রোটিয়াদের টেনে তোলার চেষ্টা করেছিলেন ডেভিড মিলার আর আন্দিলে ফিকোয়াও। কিন্তু তারাও খুব একটা স্বস্তি নিয়ে ব্যাট চালাতে পারছিলেন না। তারপরও ষষ্ঠ উইকেটে দলীয় স্কোর বোর্ডে ঐ দুই ব্যাটসম্যান যোগ করেন ৪৬ রান। ঠিক তখনই আবার প্রোটিয়া শিবিরে আঘাত করেন সেই চাহাল। এবার তিনি মিলারকে নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নেন। এর অল্প সময় পরই এ ডানহাতি স্পিনার ফিকোয়াওকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন। ফেরার আগে ফিকোয়াও করেন ৩৪ রান।
প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়ার মাঝে অষ্টম উইকেটে কিছুটা লড়াই করেন অলরাউন্ডার ক্রিস মরিচ (৪২) ও কাগিসো রাবাদা (৩১)। শেষ পর্যন্ত তাদের ৬৬ রানের জুটিতে ভর করে দুইশ রানের গন্ডি পার করে দলটি। কিন্তু রোহিত শর্মার দুর্দান্ত সেঞ্চুরির কাছে দলটি হারতে বাধ্য হয়েছে।
লেটেস্টবিডিনিউজ/এসবিপিএন