শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের উড়ন্ত জয়

কন্ডিশনের সুবিধা নিয়ে শুরুতেই শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইন আপ ধসিয়ে দেন ম্যাট হেনরি ও লকি ফার্গুসন। তাতে সহজ লক্ষ্য পায় নিউ জিল্যান্ড। পরে কলিন মানরো ও মার্টিন গাপটিলের ঝড়ে মুহূর্তের মধ্যে এলোমলো হয়ে পড়ে শ্রীলঙ্কার বোলিং। সে সুবিধা পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে এ দুই ব্যাটসম্যানের ব্যাটে ভর করে লঙ্কানদের ১০ উইকেটে উড়িয়ে দ্বাদশ বিশ্বকাপ মিশন দাপটের সঙ্গে শুরু করল নিউজিল্যান্ড।

টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শ্রীলঙ্কা ২৯.২ ওভারেই গুটিয়ে যায় মাত্র ১৩৬ রানে। দলটির হয়ে সর্বোচ্চ ৫২ রান করেন দিমুথ করুণারত্নে। এছাড়া কুশল পেরেরা ২৯ ও থিসারা পেরেরা করেন ২৭ রান। জবাব দিতে নেমে মার্টিন গাপটিল (৭৩) ও কলিন মানরোর (৫৮) ব্যাটে ভর করে মাত্র ১৬.১ ওভার খেলেই কোন উইকেট না হারিয়ে ১০ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে কিউইরা।

সহজ লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকেই লঙ্কান বোলারদের ওপর চড়াও হন নিউ জিল্যান্ডের দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও কলিন মানরো। লাসিথ মালিঙ্গার করা প্রথম ওভারেই দুটি চার হাঁকান গাপটিল। তিন ওভার পর আবার একই বোলারকে সীমানা ছাড়া করেন এ ডানহাতি। অন্যদিকে, বসে ছিলেন না মানরো। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে সুরঙ্গা লাকমালকে একবার করে চার-ছয়ে স্বাগত জানান এ বাঁহাতি। তাতে দ্রুত গতিতে লক্ষ্যের দিকে ছুটতে থাকে কিউইরা। সে পথ ধরে দলটি দলীয় অর্ধশতক পেরিয়ে যায় ৪২ বলে। তার মধ্যে ২৬ বলে ২৯ ছিল মানরোর। আর ১৬ বলে ১৯ রান ছিল গাপটিলের।

দলীয় অর্ধশতক পেরেনোর পর লঙ্কান পেসারদের ওপর আরও চড়াও হন গাপটিল। দলীয় নবম ওভারে উদানাকে পরপর দুবার চারে পরিণত করেন তিনি। পরের ওভারে থিসারা পেরার শর্ট বল ডিপ মিড উইকেট দিয়ে সীমানা ছাড়া করেন। অন্য প্রান্তে মানরোর ব্যাটও তার মতই চলতে থাকে। তাতে দিশেহারা হড়ে পড়ে লঙ্কানরা বোলাররা।
\"\"

ইনিংসের ১৩তম ওভারে উদানার করা শেষ বল মিড অনের মাথার উপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে মাত্র ৩৯ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন গাপটিল। এর কিছুক্ষণ পরই সতীর্থ মানরো হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন মাত্র ৪১ বল মোকাবেলা করে। তার আগেই কিউইদের দলীয় রান একশোতে পৌঁছায় মাত্র ৭৮ বলে। পরে জিততে দলটির লাগে আর মাত্র ১৯ বল। উইকেট পড়েনি একটিও। শেষ পর্যন্ত গাপটিল ৫১ বলে ২ ছয় ও ৮ চারে অপরাজিত ছিলেন ৭৩ রানে। অন্যদিকে মানরো অপরাজিত ছিলেন ৪৭ বলে ৬ চার ও ১ ছয়ে ৫৮ রানে। তাতে দ্বাদশ বিশ্বকাপের শুরুটা দুর্দান্ত হল নিউজিল্যান্ডের। একই সঙ্গে গাপটিল-মানরোরা অন্য দলগুলোর দিয়ে রাখলেন হুঙ্কার।

এর আগে, কার্ডিফের সবুজ উইকেট আর মেঘলা আবহাওয়ার সুবিধা শুরুতেই নিয়ে শ্রীলঙ্কার টপ অর্ডার একাই গুড়িয়ে দেন ম্যাট হেনরি। দ্বিতীয় বলেই এ ডানহাতি এলবিডব্লিয়ের ফাঁদে ফেলেন লাহিরু থিরিমান্নেকে। ওয়ান ডাউনে কুশল পেরেরা নেমে শুরুটা করেছিলেন দারুণ। ওপেনার দিমুথ করুনারত্নের সঙ্গে গড়েছিলেন ৪৭ বলে ৪২ রানের জুটি। কিন্তু নবম ওভারে পর পর দুই বলে শ্রীলঙ্কাকে আবার ব্যাক ফুটে ঠেলে সেই হেনরি। ছক্কা মারতে গিয়ে মিড অফ ও অনের মাঝেই বল নিতে পারেন পেরেরা (২৪ বলে ২৯)। সেখানেই ক্যাচ হয়ে ফেরেন এ ডানহাতি। পরের বলেই কুশল মেন্ডিস স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন শূন্য রানে।

শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংয়ের ধস পরে আরও নামান লকি ফার্গুসন। বল হাতে নিয়েই এ পেসার ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে ফেরান। কিছুক্ষণ পরই ডি গ্র্যান্ডহোমের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। এ পেসারের গতি কাছে পরাজিত হয়ে দ্রুতই ফেরান জীবন মেন্ডিসও। সে সময় লঙ্কানদের রান ৬ উইকেট ৬০। তাই অনেকেই ধরা নিয়েছিলেন দ্বীপ রাষ্টের দলটি গুটিয়ে যাবে একশ রানের মধ্যেই। কিন্তু তেমনটি হতে দেননি অধিনায়ক করুণারত্নে ও থিসারা পেরেরার সপ্তম উইকেট জুটির ৫২ রান। পরে স্যান্টনারের বলে পেরেরা বিদায় নিলে রাখা আটকে যায়নি নিউজিল্যান্ডকে। উদানা, লাকমাল ও মালিঙ্গারা আউট হওয়ার আগে শুধু অধিনায়ক করুনারত্নের বিশ্বকাপের প্রথম ফিফটি পাওয়া নিশ্চিত করতে পেরেছেন। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন তিনি। লঙ্কানদের এমন ছন্নছাড়া ব্যাটিংয়ের দিনে একটা রেকর্ড অবশ্য করে নেন করুনারত্নে। বিশ্বকাপে এই প্রথম কোনো অধিনায়ক ‘ক্যারিং দ্য ব্যাট থ্রু এ ইনিংস’ করে দেখালেন। এর আগে বিশ্বকাপে ‘ক্যারিং দ্য ব্যাট থ্রু এ ইনিংস’ দেখেছে ১৯৯ সালে। তবে রিডলি জ্যাকবসের ঘাড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের নেতৃত্ব ভার ছিল না সেবার।

নিউজিল্যান্ডের হয়ে ম্যাট হেনরি ৭ ওভারে মাত্র ২৯ রানে নেন ৩টি উইকেট। এদিকে লকি ফর্গুসন ৬.২ ওভারে ২২ রানে নেন ৩টি উইকেট। কলিন ডি গ্র্যান্ড হোম, জিমি নিশাম ও মিশেল স্ন্যাটনার পকেটে পুরেন ১টি করে উইকেট।

লেটেস্টবিডিনিউজ/এসকেবি

Scroll to Top