\’বাবারে ক্ষিদা যে সইজ্য অয় না, জানডা বারইয়া যাইতাছে। এক মুইট ভাত দে জানডা বাঁচাই।\’ ৮০ বছরের বৃদ্ধা হাজেরা বেগমের এই বুক ফাটা কাকুতি-মিনতিও পাষণ্ড ছেলে সাইফুলের মন গলাতে পারেনি। উল্টো গত বৃহস্পতিবার সকালে চলৎশক্তিহীন মাকে মারধর করে বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে ফেলে রাখে। এ অবস্থায় খোলা আকাশের নিচে তিনদিন পড়ে থেকে হাজেরা বেগম আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে।
শনিবার রাতে স্থানীয় ইউপি সদস্যের উদ্যোগে হাজেরা বেগমকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার উথুরী গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় হাজেরা বেগম শনিবার রাতে ছেলেদের বিরুদ্ধে গফরগাঁও থানায় লিখিত অভিযোগ করে।
এ ঘটনায় পুলিশ রোববার বিকেলে হাজেরা বেগমের ছেলে আব্দুস সাত্তার ও সাত্তারের ছেলে তাফাজ্জলকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার উথুরী গ্রামের মৃত রেসমত আলীর স্ত্রী হাজেরা বেগমের তিন ছেলে-সাইফুল ইসলাম, সোহরাব উদ্দিন ও আব্দুস সাত্তার। প্রায় ১৬ বছর পূর্বে স্বামী মারা যাওয়ার সময় হাজেরা বেগমের নামে ১২ কাঠা জমি লিখে দিয়ে যায়। স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলেরা হাজেরা বেগমকে কিছুদিন ভরণ-পোষণ করেন। এক পর্যায়ে ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম জোর করে গোপনে হাজেরা বেগমের কাছ থেকে ১২ কাঠা জমি নিজের নামে লিখে নেন। এ খবর পাওয়ার পর অন্য দুই ছেলে মায়ের ভরণ-পোষণ ও খোঁজখবর নেওয়া বন্ধ করে দেয়।
এ অবস্থায় হাজেরা বেগম ছোট ছেলে সাইফুলের সংসারে খাওয়া দাওয়া করতেন। কিন্তু সাইফুলের সংসারে দিনদিন তার আদর কমতে থাকে। এমনকি সাইফুল মাকে ভাত কাপড়েও দেন না। তিন বেলার মধ্যে কখনো এক বেলা খাবার দিতেন। আবার কখনো এক বেলাও তাকে খাবার দেওয়া হতো না। ভাতের জন্য কাকুতি-মিনতি করলেও দেওয়া হতো না। উল্টো মাকে মারধর অত্যাচার করতেন সাইফুল।
এ অবস্থায় স্থানীয়ভাবে একাধিক বার বিচার সালিশও হয়েছে। জমি লিখে নেওয়ায় বিচার সালিশে সাইফুলকেই হাজেরা বেগমের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু সাইফুল কোনো বিচার সালিশ মানেন না।
হাজেরা বেগম বলেন, বাবারে আর কয়ডা দিন বাইচ্চা থাহাম? ভাতের কষ্ট সইজ্য অয় না। আল্লাত মরনও দেয় না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুস ছোবাহান কালা মিয়া বলেন, হাজেরা বেগমের খাওয়া দাওয়া নিয়ে একাধিক বার বিচার সালিশ হয়েছে। বড় ছেলেরা জমি না পাওয়ায় মাকে খাওয়াতে চায় না। ছোট ছেলে সাইফুল জমি লিখে নিলেও এখন মাকে খাওয়ায় না।
গফরগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আবদুল আহাদ খান জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে হাজেরা বেগমের এক ছেলে ও নাতিকে আটক করা হয়েছে। আমি হাসপাতালে গিয়ে হাজেরা বেগমের খোঁজখবর নিয়েছি। অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়ঃ ১২১০ ঘণ্টা, ২৭ মে, ২০১৯
লেটেস্টবিডিনিউজ/এসকেবি