দ্বাদশ আসর যাদের শেষ বিশ্বকাপ

২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরু হতে আর বাকি মাত্র ২ দিন বাকি। দিন যত ঘনিয়ে আসছে ক্রিকেট ভক্তদের উন্মাদনাও ততই বাড়ছে।ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসে অনুষ্ঠেয় এই দ্বাদশ আসরের মধ্য দিয়ে কারো ক্যারিয়ার হতে যাচ্ছে শুরু আবার কারও শেষের পথে। আজ এমন কিছু তারকা ক্রিকেটারদের নিয়ে কথা বলবো যাদের এই বিশ্বকাপই ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ।

চলুন তাদের নামটা একটু জেনে নেই :

মাশরাফি বিন মর্তুজা (বাংলাদেশ)

ইতোপূর্বে ২০০৩, ২০০৭ এবং ২০১৫ আসরের পর নিজের চতুর্থ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেবেন মাশরাফি। বাংলাদেশ দলের চেয়ে বেশি ৩৫ বছর বয়সী এ তারকা খেলোয়াড়ের রয়েছে প্রচুর অভিজ্ঞতা, যে কারণে তিনি দলের অধিনায়ক। ইংল্যান্ড আসরই শেষ বিশ্বকাপ বলে ইতোমধ্যেই ঘোষনা দিয়েছেন গত জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া মাশরাফি। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ২৬৫ উইকেট শিকারী ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’।

ওয়ানডে ক্যারিয়ার : ম্যাচ-২০৯, ওভার-১৭০৮.১, রান-৮৪০২, উইকেট=২৬৫, সেরা বোলিং-৬/২৬, গড়-৩১.৭১, ইকোনোমি রেট-৪.৮২, স্ট্রাইক রেট-৩৯.৪৭।

বিশ্বকাপ রেকর্ড: ম্যাচ-১৬, ওভার-১৩১.২, রান-৬৪৯, উইকেট-১৬, সেরা বোলিং ফিগার ৪/৩৮, গড় ৩৬.৫, ইকোনোমি রেট ৪.৯৪, স্ট্রাইক রেট ৪৩.৭।

হাশিম আমলা (দক্ষিণ আফ্রিকা)

৩৬ বছর বয়সী আমলা ওয়ানডে ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী এবং জাতীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ ২৭টি সেঞ্চুরির মালিক। ২০১৮ সালে ১৬ ওয়ানডেতে এক সেঞ্চুরি এবং তিন হাফ সেঞ্চুরিসহ তার গড় রান ৩৫.২৬। বর্তমানে ক্যারিয়ারর সেরা তার স্ট্রাইক রেট ৮৯.২২।

ইতোপূর্বে ২০১১ এবং ২০১৫ দু’টি বিশ্বকাপ খেলেছেন তিনি। ২০১১ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেয়ার পর ২০১৫ আসরে ইডেন পার্কে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের কাছে পরাজিত হয়ে হতাশাজনকভাবে বিদায় নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।

ওয়ানডে রেকর্ড: ম্যাচ-১৭৪, রান-৭৯১০, সর্বোচ্চ-১৫৯, গড়-৪৯.৭৪, স্ট্রাইক রেট-৮৯.২২,সেঞ্চুরি-২৭, হাফ সেঞ্চুরি-৩৭।

বিশ্বকাপ রেকর্ড: ম্যাচ-১৫, রান-৬৩৯, সর্বোচ্চ-১৫৯, গড়-৪২.৬০, স্ট্রাইক রেট-৯১.৪১, সেঞ্চুরি-২, হাফ সেঞ্চুরি-৩।

এমএস ধোনি (ভারত)

২০১১ বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ী ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দেয়া এবং ফাইনালে শ্রীলংকান পেসার নুয়ান কুলাসেকারার বলে ছক্কা হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করা ধোনি নিজের চতুর্থ ও শেষ বিশ্বকাপ খেলতে নামছেন। ২০০৭ বিশ্বকাপে উইকেটরক্ষ হিসেবে দলে জায়গা পান অভিজ্ঞ এ তারকা খেলোয়াড়। তবে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হয় ভারতকে। ২০১৫ আসরে ধোনির নেতৃত্বে সেমিফাইনাল পর্যন্ত যেতে সক্ষম হয় দলটি।

আগামী ৭ জুলাই ৩৮ বছরে পা রাখা ধোনি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে আছেন। বিশ্বকাপ শেষে তার ওয়ানডে থেকে বিদায় নেয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

ওয়ানডে রেকর্ড: ম্যাচ-৩৪১, রান-১০৫০০, সর্বোচ্চ ১৮৩*, গড়-৫০.৭২, স্ট্রাইক রেট- ৮৭.৫৫, সেঞ্চুরি-১০, হাফ সেঞ্চুরি-৭১।

বিশ্বকাপ রেকর্ড: ম্যাচ-২০, রান-৫০৭, সর্বোচ্চ-৯১*, গড়-৪২.২৫, স্ট্রাইক রেট-৯১.১৮, সেঞ্চুরি-০, হাফ সেঞ্চুরি-৩।

ক্রিস গেইল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

২৮৬ ম্যাচে ব্রায়ান লারার করা ১০০৯৬ রানকে পিছনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল। আসন্ন আসর নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপ শেষেই ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন তিনি।

বিশ্বকাপে গেইলের একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরিটি এসেছিল ২০১৫ আসরে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৪৭ বলে ২১৫ রান করেছিলেন তিনি।

চলতি বছর চার ওয়ানডে ইনিংসে ১৩৪ স্ট্রাইক রেটে ১০৬ গড়ে মোট ৪২৪ রান করেছেন এ ব্যাটিং দানব।

ওয়ানডে রেকর্ড: ম্যাচ-২৮৯, রান-১০১৫১, সর্বোচ্চ ২১৫, গড়- ৩৮.১৬, স্ট্রাইক রেট-৮৭.১৪, সেঞ্চুরি-২৫, হাফ সেঞ্চুরি-৫১।

বিশ্বকাপ রেকর্ড: ম্যাচ-২৬, রান- ৯৪৪, সর্বোচ্চ ২১৫, গড়-৩৭.৭৬, স্ট্রাইক রেট-৯১.১১, সেঞ্চুরি-২, হাফ সেঞ্চুরি-৪।

লাসিথ মালিঙ্গা (শ্রীলংকা)

আসন্ন আসর হবে লাসিথ মালিঙ্গার চতুর্থ ও শেষ বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপে টানা চার বলে চার উইকেট শিকার করা একমাত্র বোলার শ্রীলংকার মালিঙ্গা। ২০০৭ বিশ্বকাপে তার এ অসাধারন বোলিং নৈপুণ্যে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছিল লংকানরা।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তার সেরা বোলিং ফিগার ছিল ২০১১ বিশ্বকাপে। কেনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে একটি হ্যাটট্রিকসহ ৩৮ রানে ৬ উইকেট শিকার করেন মালিঙ্গা।

৩৫ বছর বয়সে নিজের শেষ বিশ্বকাপে শেষবারের মত কিছু করতে চাইবেন তিনি।

ওয়ানডে রেকর্ড: ম্যাচ-২১৮, ওভার-১৭৫১.২, রান-৯৩৪৯, উইকেট- ৩২২, সেরা বোলিং ফিগার-৬/৩৮, গড়-২৯.০৩, স্ট্রাইক রেট-৩২.৬।

বিশ্বকাপ রেকর্ড: ম্যাচ-২২, বল ১৭০.৪, রান-৯০৮, উইকেট-৪৩, সেরা বোলিং ফিগার-৬/৩৮, গড়-২১.১১, ইকোনোমি রেট-২৩.৮।

মোহাম্মদ হাফিজ (পাকিস্তান)

ওয়ানডে ক্রিকেটে পাকিস্তানের দশম সফল ব্যাটসম্যান ৩৮ বছর বয়সী হাফিজ। ক্যারিয়ারে ২১০টি ওয়ানডে খেললেও তিনি মাত্র ২০০৭ ও ২০১১ দু’টি বিশ্বকাপ খেলেছেন।

সম্প্রতি তিনি পিঠে অস্ত্রোপচার থেকে ফিরেছেন এবং বাধ্যতামুলক ফিটনেস পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়ে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিয়েছেন এ অলরাউন্ডার।

ওয়ানডে রেকর্ড: ম্যাচ-২১০, রান-৬৩৬১, সর্বোচ্চ ১৪০*, গড়-৩২.৯৫, স্ট্রাইক রেট-৭৬.১৯, সেঞ্চুরি-১১, হাফ সেঞ্চুরি-৩৭, উইকেট-১৩৭, সেরা বোলিং ফিগার-৪/৪১।

বিশ্বকাপ রেকর্ড: ম্যাচ-১০, রান-২৩০, সর্বোচ্চ ৬১*, গড়-২৫.৫৫, স্ট্রাইক রেট-৭৬.৯২, সেঞ্চুরি-০, হাফ সেঞ্চুরি-১, উইকেট-১১, সেরা বোলিং ফিগার-২/১৬।

ডেল স্টেইন (দক্ষিণ আফ্রিকা)

১৯৯২ আসরে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। বরাবরই দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়ানডে ক্রিকেটে শক্তিশালী দল। তবে আজ পর্যন্ত কোনদিন ট্রফি স্পর্শ করতে পারেনি ‘চোকার’ প্রোটিয়ারা। আগামী জুন মাসে ৩৬ বছরে পা রাখতে যাওয়া স্টেইন নিজের শেষ বিশ্বকাপে দলকে ট্রফি এনে দিতে চাইবেন।

২০০৫ সালে ওয়ানডে অভিষেক হওয়ার পর এ ফাস্ট বোলার ২০১১ ও ২০১৫ দু’টি বিশ্বকাপ খেলেছেন। তবে দুবারই ভগ্ন হৃদয়ে ফিরতে হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। শন পোলক, এ্যালান ডোনাল্ড, জক ক্যালিস এবং মাখায়া এনটিনির পর দক্ষিণ আফ্রিকার পঞ্চম সফল বোলার স্টেইন।

ওয়ানডে রেকর্ড: ম্যাচ-১২৫, ওভার-১০৪২.২, রান-৫০৮৭, উইকেট-১৯৬, সেরা বোলিং-৬/৩৯,গড়-২৫.৯৫,ইকোনোমি রেট-৪.৮৭, স্ট্রাইক রেট-৩১.৯।

বিশ্বকাপ রেকর্ড: ম্যাচ-১৪, ওভার-১১৫, রান-৫৩৮, উ্ইকেট-২৩, সেরা বোলিং-৫/৫০,গড়-২৩.৩৯, ইকোনোমি রেট-৪.৬৭, স্ট্রাইক রেট=৩০।

রস টেইলর (নিউজিল্যান্ড)

৩৫ বছর বয়সী টেইলরের এটা হবে শেষ বিশ্বকাপ। ২০০৬ সালে অভিষেক হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৪৮দশমিক ৩৪ গড়ে ওয়ানডেতে তার মোট রান ৮০২৬। গত ফেব্রুয়ারীতে তিনি স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের ৮০০৭ রানকে পেছনে ফেলে দেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর আসনটি নিজের দখলে নেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ ২০ সেঞ্চুরির মালিকও তিনি।

গত মার্চে টেইলর নিউজিল্যান্ডের বর্ষ সেরা ওয়ানডে খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি লাভ করেন। এ বছরে ৮৪ গড়ে মোট ৭৫৯ রান করার সুবাদে সেরা ওয়ানেড খেলোয়াড় নির্বাচিত হন তিনি।

ওয়ানডে রেকর্ড: ম্যাচ-২১৮, রান-৮০২৬, সর্বোচ্চ-১৮১*, গড়-৪৮.৩৪, স্ট্রাইক রেট-৮৩.৩৭,সেঞ্চুরি-২০, হাফ সেঞ্চুরি-৪৭।

বিশ্বকাপ রেকর্ড: ম্যাচ-২৩, রান-৬৫২, সর্বোচ্চ ১৩১*, গড়-৩৬.২২, স্ট্রাইক রেট-৭৩.৩৪, সেঞ্চুরি-১, হাফ সেঞ্চুরি-৩।

এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ (শ্রীলংকা)

বার বার ইনজুরিতে পড়ার কারণে ৩১ বছর বয়সী ম্যাথুজের শেষ বিশ্বকাপ হতে পারে ২০১৯ আসর। তিনি হয়তোবা ২০২৩ সাল পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যেতে পারেন। তবে পরবর্তী বিশ্বকাপে তার অংশ গ্রহণ বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে।

ইনজুরির কারণে গত জানুয়ারীতে নিউজিল্যান্ড সফর থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন সাবেক এ অধিনায়ক। এরপর অস্ট্রেলিয়ায় দুই টেস্ট এবং পুরো দক্ষিণ আফ্রিকা সফর মিস করেন হ্যামস্ট্রিং সমষ্রার কারণে। শ্রীলংকার ঘরোয়া ইন্টার প্রোভিন্সিয়াল ক্রিকেট টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ২২৭ রান করে ফিটনেস পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়ে পুনরায় বিশ্বকাপ দলে ডাক পান ম্যাথুজ।

শ্রীলংকার নবম সফল এ ব্যাটসম্যান ২০১১ ও ২০১৫ বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন।

ওয়ানডে রেকর্ড: ম্যাচ-২০৪, রান-৫৩৮১, সর্বোচ্চ ১৩৯*, গড়-৪২.০৩, স্ট্রাইক রেট-৮৩.২৮, সেঞ্চুরি-২, হাফ সেঞ্চুরি-৩৭, উইকেট-১১৪, সেরা বোলিং-৬/২০।

বিশ্বকাপ রেকর্ড: ম্যাচ-১৫, রান-২৮৯, সর্বোচ্চ-৫১, গড়-৩৬.১২, স্ট্রাইক রেট-৯৪.১৩, উইকেট-১২, সেরা বোলিং-৩/৪১।

শোয়েব মালিক (পাকিস্তান)

১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে অভিষেক হওয়ার পর এ পর্যন্ত ২৮৪ ওয়ানডে খেললেও অভিজ্ঞ এ অলরাউন্ডার পাকিস্তানের হয়ে মাত্র একটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন। ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে পাকিস্তানের হতাশাজনক মিশনে দলের হয়ে তিন ম্যাচের সবক’টিতেই খেলেছিলেন তিনি।

৩৭ বছর বয়সী পাকিস্তানের সাবেক এ অধিনায়ক নিজের শেষ বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন।

ওয়ানডে রেকর্ড: ম্যাচ-২৮৪, রান-৭৫২৬, সর্বো”-১৪৩, গড়-৩৫, স্ট্রাইক রেট-৮১.৯১, সেঞ্চুরি-৯, হাফ সেঞ্চুরি-৪৪, উইকেট-১৫৭, সেরা বোলিং-৪/১৯।

বিশ্বকাপ রেকর্ড: ম্যাচ-৩, রান-৯২, সর্বোচ্চ-৬২, গড়-৩০.৬৬, স্ট্রাইক রেট-৮২.৮৮, হাফ সেঞ্চুরি-১, উইকেট-১, সেরা বোলিং-১/৯।

বাংলাদেশ সময়ঃ ১১১৪ ঘণ্টা, ২৭ মে, ২০১৯

লেটেস্টবিডিনিউজ/কেএস

Scroll to Top