২০১৪ সালের মতো এবারও ভরাডুবি হলো রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের। রাহুলের মা সোনিয়া গান্ধী কংগ্রেসের অধীন ইউপিএ জোটের চেয়ারম্যান। জোট রাজনীতির মারপ্যাঁচে তিনি ইউপিএকে তলানি থেকে উঠিয়ে আনতে পারলেন না। ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে নামানো হয় রাহুলের বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে। তিনি মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। তবে ভোটের মাঠে তিনি ব্যর্থ হলেন। স্বাধীনতার পর প্রায় চার দশক ভারত শাসন করা কংগ্রেসের এই নাজুক অবস্থা কেন? কেনইবা দিন দিন দলটি সর্বভারতীয় চরিত্র হারিয়ে ফেলছে? এর পেছনে পাঁচটি কারণ থাকতে পারে।
দুর্বল নেতৃত্ব: সোনিয়া গান্ধী কংগ্রেসের সভাপতি থাকাকালে নেহরু-গান্ধী পরিবারের রাজনৈতিক আধিপত্য ছিল। সোনিয়ার আমলে দু\’বার ইউপিএ জোটের ওপর ভর করে সরকার গড়ে কংগ্রেস। তবে ২০১৪ সাল থেকে দলের মূল ভূমিকায় আসেন রাহুল। তার পর থেকে কংগ্রেসের নেতৃত্ব ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ে। জাতীয় চরিত্রের রাজনীতিক হিসেবে নিজের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে পারেননি তিনি, যেটা পেরেছেন মোদি। প্রধানমন্ত্রী থেকে ভারতের ব্র্যান্ড হয়ে গেছেন মোদি।
বিজেপিবিরোধী ইস্যু চাঙ্গা করা যায়নি: রাহুল গান্ধী বিজেপির বিরুদ্ধে বেশ কিছু ইস্যু নিয়ে ভোটের প্রচারে নেমেছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রাফায়েল দুর্নীতি, অর্থনীতির মন্দা গতি, কৃষক অসন্তোষ ও সংখ্যালঘু নির্যাতন। তবে এসব ইস্যুতে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন রাহুল। রাজনীতির জন্য সঠিক সময়ে সঠিক ইস্যু তৈরি করে মানুষের কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব হয়নি তার।
আঞ্চলিক দলের আস্থাহীনতা: উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী ও অখিলেশ যাদবের সঙ্গে জোট গড়তে ব্যর্থ হন রাহুল। তাদের দৃষ্টিতে, রাহুলের রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা নেই। একই চিত্র পশ্চিমবঙ্গেও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তার নেতৃত্ব মেনে নিতে রাজি হননি। মোটা দাগে এমন চিত্র আরও কিছু রাজ্যে।
মোদিঝড়: প্রধানমন্ত্রী মোদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক ইস্যুতে ঝড় তুললেও রাহুল তা পারেননি। গণমাধ্যমে তার মুখ দেখা গেছে খুবই কম। মোদির মতো তিনি তেমন প্রচারে আসতে বা থাকতে পারেননি।
পারিবারিক রাজনীতির প্রতি অনীহা: বিজেপি যেভাবে গান্ধী পরিবার নিয়ে নেতিবাচক রাজনীতি করেছে, তা মোকাবেলা করতে পারেনি কংগ্রেস। জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধীকে নিয়ে বিতর্কিত ইস্যু চাঙ্গা করে ভোটের মাঠে ফায়দা তুলেছেন মোদি ও অমিত শাহরা। আর অমিত শাহর ধর্মীয় রাজনীতি মোকাবেলার মতো তেমন কোনো অস্ত্র ছিল না রাহুলের হাতে। ভারতের স্বাধীনতার পর ৭২ বছরের মধ্যে ৫৫ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থেকেছে কংগ্রেস। এর মধ্যে রাজীব গান্ধী নিহত হওয়ার পরই কেবল কয়েক বছরের জন্য দলের নেতৃত্ব গান্ধী পরিবারের বাইরের কারও হাতে ছিল। দীর্ঘ সময় দল ও দেশের নেতৃত্বে থাকা পরিবারটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিরও অভিযোগ ছিল অতীতে। এবার বিজেপি সেই বিষয়টি সামনে আনতে পেরেছেন ভালোমতোই, যা ভোটারদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে।