অর্থনৈতিক দুরবস্থা, কৃষকদের সংকট ও বেকার সমস্যা মোদির জয়রথ থামিয়ে দিতে পারে বলে অনুমান করেছিলেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্নেষক। কিন্তু আজ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, মোদি ঝড়ে সেসব দুমড়েমুচড়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় ভোট গণনা। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত বেসরকারি ফলাফলে অনেক এগিয়ে বিজেপি। ৫৪২টি আসনের মধ্যে ৩৪৮টি আসনেই এগিয়ে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ এগিয়ে ৮৮টিতে এবং অন্যান্য দল এগিয়ে ১০৬টি আসনে আসনে। খবর এনটিভির
কোনো দলকে সরকার গঠন করতে হলে জয় দরকার ২৭২টি আসনে। মোদি জোট ৩২৭টি আসনেই এগিয়ে। ফলে ২০১৪ সালের মতো ফের বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি।
উত্তর প্রদেশের বিতর্কীত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে যেখানে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টি কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে ফেলার কথা ছিল বিজেপিকে, সেখানে বিজেপি ৮০ টি আসনের মধ্যে ৫৮ টি আসনে এগিয়ে। ৮টিতে এসপি এবং ১১টিতে বিএসপি এগিয়ে রয়েছে। কংগ্রেস একটিমাত্র আসনে এগিয়ে। আমেথিতে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে বিজেপি\’র স্মৃতি ইরানীর।
মোদি ঝড় যে কেবল হিন্দিবলয় ও গুজরাটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে তা নয়। পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র এবং কর্নাটকেও মোদির জয়জয়কার দেখে গেছে। শুধু কেরালা, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলঙ্গানায় মোদি ঢেউ দেখা যায়নি।
এ দিকে চার হাজারেরও বেশি কেন্দ্রে কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। তারা নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থও হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের সম্পূর্ণ ফলাফল সন্ধ্যার মধ্যে চলে আসবে।
ইতোমধ্যে নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী রনীল উইকরেসিংহে। এছাড়া টুইটারে মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ।
ভারতের পার্লামেন্টের লোকসভার ৫৪৩ টি আসনের মধ্যে এবার ভোট হয়েছে ৫৪২ টি আসনে। কোনো দলকে সরকার গঠন করতে হলে জিততে হবে ২৭২টি আসনে।
সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন শুরু হয় ১১ এপ্রিল। সাত দফায় ভোট শেষ হয় গত রোববার। এবার লোকসভা নির্বাচনে ৯০ কোটি ভোটারের মধ্যে প্রায় ৬০ কোটি ভোটার ভোট দিয়েছেন।
২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত ১৫তম লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল ১১২ আসন। ২০১৪ সালে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএর শরিক দলগুলো পায় ৫৪ আসন। সব মিলিয়ে এনডিএর আসন হয় ৩৩৮টি।
গত রোববার ১৪টি বুথফেরত সমীক্ষা প্রকাশ করা হয়। এর ১২টিতেই বলা হয়, মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। জরিপের গড় হিসেবে দেখা যায়, বিজেপি জোট লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে ৩০২টি আসন পেতে পারে। আর কংগ্রেস জোট পেতে পারে ১২২ আসন। সমীক্ষার সঙ্গে আজকের প্রাথমিক ফল যেন মিলে যাচ্ছে।
ভারতের নির্বাচনে এবার সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপক ব্যবহার হয়েছে। আর এতে এগিয়ে ছিলেন মোদি। সোশ্যাল মিডিয়ার কতটা দখল কার হাতে থাকছে, সেদিকে বিশেষ নজর রেখেছিল প্রায় সব রাজনৈতিক দলই। সাত দফার নির্বাচনে শুধু ভোটগ্রহণের দিনগুলোকে নিয়ে একটি সমীক্ষা করে নয়াদিল্লি ইন্দ্রপ্রস্থ ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি। এতে দেখা যায়, শুধু ভোটের দিনগুলোতেই মোট ১৭ লাখ ৪০ হাজার করা হয়েছে টুইটারে। সেখান থেকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল মোট ৮৬১টি হ্যাশট্যাগকে। দেখা যায় সেই হ্যাশট্যাগের লড়াইতে সবার আগে মোদি।