রমজানের আগে খোলাবাজার থেকে ৪০৬টি পণ্যের নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষা করে বিএসটিআই। এরমধ্যে ল্যাব পরীক্ষায় ৫২টি পণ্যকে মানবহির্ভূত হিসেবে শনাক্ত করা হয়। বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় মানহীন ৫২ টি পণ্য বাজার থেকে তুলে নেয়ার নির্দেশনা দেয় হাইকোর্ট।
গেল ৯ই মে কনসাস কনজ্যুমার সোসাইটি বিএসটিআই এর পরীক্ষায় পাওয়া ৫২টি মানহীন পণ্য বাজার থেকে জব্দের আদেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। এরপর, ১২ই মে রিটের প্রাথমিক শুনানি হয়। এতে ওই ৫২টি পণ্য উৎপাদন এবং বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন আদালত।
এদিকে ঢাকার বড় বাজারগুলো থেকে ৫২টি মানহীন পণ্য প্রায়ই উঠে গেছে। দোকানিরা বলছেন, আদালতের নির্দেশনার বাইরে গিয়ে তারাও পণ্যগুলো বিক্রি করছেন না, আবার কোম্পানিগুলোও সেগুলো তুলে নিয়ে যাচ্ছে।
আদেশের ১০ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার আগে বুধবার ঢাকার মিরপুর, কারওয়ান বাজার, সেগুনবাগিচা, শ্যামলী এলাকার বড় বাজারগুলোর ঘুরে অধিকাংশ দোকানেই সেই পণ্যগুলো দেখা যায়নি।
কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এতদিন দোকানগুলোতে এসিআই ব্র্যান্ডের যে লবণ ছিল সেখানে তা আর নেই। সেখানে সিএসআই ব্রান্ডের সুপার সল্ট ও মোল্লা সুপার সল্টের আধিক্য।
নিষিদ্ধ অন্যান্য পণ্যগুলো কর্তৃপক্ষ বাজার থেকে নিজ উদ্যোগে প্রত্যাহার করে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন অধিকাংশ দোকানি।
পীরেরবাগে মুদি দোকানি আবুল কালাম বলেন, “মোল্লা লবণ নিষিদ্ধ করা হলেও মোল্লা সুপার সল্টের লবণে নিষেধাজ্ঞা নেই। কোম্পানি মোল্লা লবণ প্রত্যাহার করে নিয়ে মোল্লা সুপার সল্ট দিয়ে গেছে।”
বিএসটিআই কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে মোল্লা সুপার সল্টের উপর নিষেধাজ্ঞা না থাকার কথা জানা যায়।
মিরপুর বড়বাগের মুদি দোকানি আনোয়ার হোসেন বলেন, তীর ও রূপচাঁদার সরিষার তেল তার দোকান থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে কোম্পানিগুলো। এসিআই লবণও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের মামা-ভাগিনা জেনারেল স্টোরের দোকানি কাজী আনোয়ার বলেন, “যে দিন হাই কোর্ট থেকে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে, এর পরের দিন থেকে কোম্পানিগুলো তাদের সেসব পণ্য নিয়ে যাওয়া শুরু করে। এরপর থেকে আমরাও ওইসব কোনো পণ্য আর বিক্রি করছি, কাস্টমারও সেগুলো নিচ্ছে না।”
আনোয়ার দাবি করেন, তার দোকানে ওই ৫২টি পণ্যর কোন একটিও এখন আর নেই।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢা্কা বিভাগীয় প্রধান মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, তাদের অনুরোধে অধিকাংশই কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যগুলো প্রত্যাহার করে নিয়েছে। জেলা পর্যায়ে দোকানিরা কিছু নিষিদ্ধ পণ্য রেখে দিয়েছে। অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়গুলো এধরনের অপরাধ চোখে পড়লেই ব্যবস্থা নিচ্ছে।
ইতোমধ্যেই ওই ৫২টি পণ্য নিয়ে বাজার তদারকি প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাজার থেকে পণ্যগুলো প্রত্যাহার করতে একইভাবে কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। তিন দিনের মধ্যে সেই আদেশ বাস্তবায়ন করা না হলে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তুষার আহমেদ বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই ৫২টি পণ্যের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুই দিন ঢাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন তারা।
“সেখানে কিছু নিষিদ্ধ পণ্য পেয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চলতি মাসেই আরও চারটি মোবাইল কোর্ট চালানো হবে।”