ভারতের ১৭তম লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের অপেক্ষায় আছে পুরো দেশের মানুষ। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদিই আসছেন নাকি ১৫তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অন্য কেউ নয়াদিল্লির দখল নেবেন? এমন প্রশ্নই উঁকি দিচ্ছে। বুথফেরত সমীক্ষার সম্ভাবনাকে পেছনে ফেলে আজ সরাসরি এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হবে ভোট গণনা। বৃহস্পতিবার বেলা যত বাড়বে, ততই স্পষ্ট হয়ে যাবে কার দখলে যাচ্ছে দিল্লি। তবে এর জন্য আরও কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। সারাদেশ জুড়ে প্রায় দেড় মাস ধরে সাত দফার নির্বাচন শেষে আজ ফল ঘোষণা হবে।
সাত দফার নির্বাচনের শেষের দিন থেকেই অবশ্য সামনে এসেছে বিভিন্ন সংস্থার বুথফেরত সমীক্ষার ফলাফল। ওই ফলাফলের হিসাবে বাকি সবার চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে শাসকদল এনডিএ জোটকেই। দেশজুড়ে ভাল ফল করতে চলেছে বিজেপি, এমনটাই অভিমত পাওয়া গেছে বেশির ভাগ বুথফেরত সমীক্ষাতে।
বুথফেরত সমীক্ষার এই প্রভাব দেখা গেছে এনডিএ নেতা-কর্মীদের মধ্যেও। শরিকদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে জোটবদ্ধ থাকার একটা প্রচেষ্টা ছিল মঙ্গলবারের এনডিএ বৈঠকেও। বিভিন্ন সূত্র বলছে, সেখানেই মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের সঙ্গে ছোট একটি বৈঠকও করে ফেলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাশাপাশি একটি বৈঠক সেরেছেন বিদায়ী সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত আমলাদের সঙ্গেও।
কোন পথে যাবে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট, আগের এনডিএ সরকার থেকে কতটা আলাদা হবে ভবিষ্যত সরকারের নীতি, সেই নকশাও নাকি তৈরি করে ফেলেছেন মোদি-অমিত শাহ জুটি। নির্বাচনে বিপুল জনসমর্থন পাওয়ার জন্য দেশের জনতাকে আগাম অভিনন্দন জানিয়ে দিয়েছেন বিদায়ী সরকারের বস্ত্রমন্ত্রী স্মৃতি ইরানিও।
বুথফেরত সমীক্ষার ফল সামনে আসার পর শাসক দলের মধ্যে আবেগে ভাসার প্রবণতা দেখা দিলেও কর্মী সমর্থকদের চাঙ্গা করতে বিরোধীদের মধ্যে তৎপরতার কোনও অভাব নেই। ভোট শেষ হওয়ার পরই ইভিএম কারচুপির প্রসঙ্গ তুলে নির্বাচন কমিশনের উপর চাপ তৈরি করে স্ট্রং রুম পাহারা দেওয়ার ডাক দিয়ে বিরোধীরা তাদের দলীয় কর্মী-সমর্থকদের হতাশা ঢাকার চেষ্টা করেছেন।
অন্যদিকে, ফলাফল সামনে আসার পর বিরোধীদের কী কৌশল নেওয়া হবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে একের পর এক ম্যারাথন বৈঠক। ভোটের পরই সামনে আসবে মহাজোটের চরিত্র, যার মেরুদণ্ড হবে বিজেপি বিরোধিতা। এই কথাই বার বার বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, চন্দ্রবাবু নায়ড়ু, অখিলেশ যাদব, ফারুক আবদুল্লারা। ভোট পরবর্তী জোটের ছবিই যেন স্পষ্ট হল গত কয়েকদিনে চন্দ্রবাবু নায়ড়ুর গতিবিধিতে।
ভোটের আগেই ভোট পরবর্তী জোট সমীকরণ নিয়ে দৌড়োদৌড়ি শুরু করে দিয়েছিলেন চন্দ্রবাবু। তা যেন আরও তীব্রতা পেল ১৯ মে শেষ দফার ভোটের পরই। সুদূর দক্ষিণ থেকে কখনও কলকাতা, কখনও নয়াদিল্লি, কখনও লক্ষ্ণৌও, দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত চষে বেড়িয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবারই নয়াদিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে বিরোধীদের একজোট করে একটি বৈঠক সেরে ফেলেছেন তিনি। সেই বৈঠকে কংগ্রেস ছাড়াও ছিলেন তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, ন্যাশনাল কনফারেন্স, তেলুগু দেশম, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি, রাষ্ট্রীয় জনতা দলসহ আরও বিভিন্ন বিজেপি বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা। বিজেপি প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেয়ে একক বৃহত্তম দল হলেও যাতে কোনও অতিরিক্ত সুবিধা না পায়, সেই কৌশলের কথাই বলা হয়েছে বৈঠকে। সূত্রের খবর এমনটাই জানাচ্ছে।
বুথফেরত সমীক্ষার ফল আসল ফলাফলের সঙ্গে মিলছে না এমন ঘটনার নিদর্শনও আছে অনেক। কিছুদিন আগেই অস্ট্রেলিয়া আর ব্রাজিলে ঘটেছিল এমন ঘটনা। বুথফেরত সমীক্ষা বলল এক, হল আর এক। ভারতের নির্বাচনেও এমন ঘটনা নতুন নয়। অনেকে বলছেন, ২০০৪-এর লোকসভা নির্বাচনের কথা। সেই নির্বাচনেও ক্ষমতায় ফিরবে এনডিএ সরকারই, এমনটাই বলেছিল বুথফেরত সমীক্ষা। যদিও তা মেলেনি। উল্টো তৈরি হয়েছিল মনমোহনের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার। এ রকম কিছু হবে, সেই আশাতেই বুক বেঁধে আজ ভোটগণনার দিকে কড়া নজর রাখছে বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। নজর রাখছে সাধারণ মানুষও।