ট্রেনের ঈদযাত্রার টিকিট বিক্রি বুধবার থেকে শুরু হযেছে। প্রতি বছর ঈদে অভিযোগ ওঠে, রেলের উচ্চ শ্রেণির টিকিট পেয়ে যান \’ভিআইপিরা\’। ২৪/২৫ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট পান না সাধারণ মানুষ। এমপি-মন্ত্রী-রাজনীতিক-আমলাদের সুপারিশে টিকিট পেয়ে যান বিশেষ ব্যক্তিরা। এবার তা বন্ধে উদ্যোগী হয়েছে রেল। মন্ত্রী, এমপি, বিচারপতিদের টিকিট দেওয়া হবে ব্যক্তি ভ্রমণে চাহিদা অনুযায়ী। তবে তাদের সুপারিশে টিকিট দেওয়া হবে না কাউকে। রেলের কর্মীদের জন্য নির্ধারিত কোটা সংরক্ষণ করা হবে। তবে টিকিট নিতে হবে পাস দেখিয়ে।
এদিকে ঈদযাত্রার ট্রেনের টিকিট পেতে রেলমন্ত্রীকে তার নিজের মেয়েই একটি তালিকা দিয়েছিলেন, যা তিনি গ্রহণ করেননি। আর মন্ত্রীর একান্ত সচিবের (পিএস) স্ত্রীর মাধ্যমে অনুরোধ এসেছিল টিকিটের। পিএস সেটি প্রত্যাখান করেছেন। এমনকি পিএস তার অফিস কক্ষের দরজায় লিখেও রেখেছেন- ‘এখানে টিকিটের সুপারিশ করা হয় না।’
নতুন রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন আর তার একান্ত সচিব আতিকুর রহমান। দুজনই এখন টিকিট সংক্রান্ত চাপে রয়েছেন।রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, ঈদযাত্রার টিকিট নিয়ে দুর্নীতি হলে সহ্য করা হবে না। এরই মধ্যে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে সব টিকিট। ব্যক্তিবিশেষকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে না।
রেল সূত্র জানিয়েছে, অতীতে ভিআইপিদের সুপারিশে কেবিন, এসি ও প্রথম শ্রেণির টিকিট সাধারণ মানুষ পেতেন না। ভিআইপিদের চাহিদা পূরণে টিকিট সার্ভারেই ব্লক করা হতো, যা কাউন্টার থেকে বিক্রি করা যেত না। এবার এ সুযোগ থাকছে না। রেল ভবন থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, টিকিট ব্লক করা যাবে না।
প্রতি বছর ঈদের টিকিট শুধু কমলাপুর থেকে বিক্রি হলেও এবার পাঁচ জায়গা থেকে দেওয়া হচ্ছে। পশ্চিমাঞ্চল অর্থাৎ রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের জেলাগুলোর ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে কমলাপুর থেকে। বিমানবন্দর স্টেশনে পাওয়া যাচ্ছে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী ট্রেনের টিকিট। তেজগাঁও থেকে বিক্রি হচ্ছে ময়মনসিংহ ও জামালপুর ট্রেনের টিকিট। বনানী থেকে দেওয়া হচ্ছে নেত্রকোনা ও মোহনগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট। সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট দেওয়া হচ্ছে ফুলবাড়িয়ার পুরনো রেল ভবন থেকে।
বৃহস্পতিবার বিক্রি করা হবে ১ জুনের টিকিট। ২৪ মে দেওয়া হবে ২ জুনের টিকিট। ২৫ মে বিক্রি হবে ৩ জুনের টিকিট। ২৬ মে দেওয়া হবে ৪ জুনের টিকিট।
গত বছরের ঈদুল ফিতরের সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ৩১টি আন্তঃনগর ট্রেনে আসন সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ৩৪৫টি। এবার তা বেড়ে হয়েছে ২৭ হাজার। ঈদের আগের পাঁচ দিন ছয় জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানো হবে। এতে আসন সংখ্যা আরও বাড়বে।
প্রতি বছর কমলাপুর স্টেশনে ঈদযাত্রার টিকিটের জন্য ভিড় করেন লাখো মানুষ। এবার দুর্ভোগ কমাতে অর্ধেক টিকিট বিক্রি হবে \’রেল সেবা\’ অ্যাপের মাধ্যমে। বাংলাদেশে তৈরি এ অ্যাপের মাধ্যমে ঘণ্টায় ১৫ হাজার টিকিট বিক্রি সম্ভব। গত ২৮ এপ্রিল অ্যাপটি চালুর পর ১৭ মে পর্যন্ত ডাউনলোড হয়েছে এক লাখের বেশি বার। অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৩১টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। ২২ হাজার ৩২টি টিকিট বিক্রি হয়েছে অ্যাপের মাধ্যমে।