‘আল্লাহ্‌ আমাদের বাঁচানোর জন্যই জেলেদের পাঠিয়েছিলেন’

লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে শুক্রবার ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে প্রায় ৬০ জন মারা গেছে বলে জানিয়েছে তিউনিসিয়া রেড ক্রিসেন্ট। নিহতদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি।

নৌকাডুবির পর ১৪ বাংলাদেশিসহ ১৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে তিউনিসিয়ার জেলেরা। তাদেরই একজন সিলেটের আহমদ বিলাল। সাগরের বরফ শীতল পানি থেকে নিজে বেঁচে ফিরলেও নৌকাডুবিতে দুই আত্মীয়কে হারিয়েছেন তিনি।

প্রায় নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফেরার পর বার্তা সংস্থা এএফপির কাছে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন বিলাল। তিনি বলেন, ‘নৌকাডুবির পর চোখের সামনে অনেককে সাগরের ঠাণ্ডা পানিতে তলিয়ে যেতে দেখেছি। কিন্তু আল্লাহ্‌ আমাদের বাঁচানোর জন্যই ওই জেলেদের পাঠিয়েছিলেন। তারা আমাদের প্রাণ বাঁচিয়েছেন।’

সাগরে ডুবে যাওয়া নিজের দুই আত্মীয়ের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমি নিজের কান্না থামাতে পারছি না।’

৩০ বছর বয়সী বিলাল জানান, প্রায় ৬ মাস আগে তাদের এই যাত্রা শুরু হয়। প্রথমে বাংলাদেশ থেকে বিমানে দুবাই পৌঁছান তিনি। সেখান থেকে আবার তাদের বিমানে তুরস্কের ইস্তানবুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ইস্তানবুল থেকে বিমানে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে। পরে তাদের লিবিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের নিয়ে আরও ৮০ জন বাংলাদেশির সঙ্গে একটি কক্ষে রাখা হয়। ওই কক্ষে ৩ মাস ছিলেন তারা।

বিলাল বলেন, ‘এর আগে আমি ভেবেছিলাম লিবিয়াতেই মারা যাবো। সেখানে সারা দিনে মাত্র একবার খাবার দেওয়া হতো আমাদের। কোনোদিন আবার সেটিও ভাগ্যে জুটতো না। ৮০ জন লোকের জন্য ছিল একটি মাত্র টয়লেট। আমরা দাঁতব্রাশ করা ছাড়া নিজেদের আর পরিষ্কার করার সুযোগ পেতাম না। এমন পরিস্থিতিতে আমরা শুধু কাঁদতাম আর খাবার ভিক্ষা চাইতাম।’

উন্নত জীবন কাটানোর স্বপ্নে ইউরোপে পারি জমানো বিলাল বলেন, ‘এখন আমার আর কিছুই নেই।’

তিনি জানান, তাকে ইউরোপে পাঠাতে এক মানব পাচারকারীকে প্রায় ৭ হাজার ডলার দিয়েছেন তার বাবা।

বিলাল বলেন, ‘উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে আমার মতো আরও অনেকের কাছ থেকেই টাকা নিয়েছেন ওই পাচারকারী। আমার বিশ্বাস, তাদেরও আমাদের মতো এমন মৃত্যুর পথে ঠেলে দিয়েছেন তিনি।’

Scroll to Top