বাংলালিংক কিনে নিতে যাচ্ছে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর রিলায়েন্স জিও। সংশ্নিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, বাংলালিংকের মূল মালিকানায় থাকা ইউরোপের বহুজাতিক টেলিকম কোম্পানি ভিয়ন ও রিলায়েন্স জিও কর্তৃপক্ষের মধ্যে মার্চের শেষ সপ্তাহে মুম্বাইয়ে এ বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে ভিয়নের কাছ থেকে বাংলালিংকের মালিকানা অধিগ্রহণে সম্মত হয় জিও। এখন চলছে অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া। তা শেষ হলেই বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির কাছে এ-সংক্রান্ত আবেদন জানানো হবে। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরের নাগাদ শেষ হবে বলে জানা গেছে।
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার তৈমুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে জানান, তিনি কিছু কিছু কথা শুনেছেন, যা অনেকটা গুঞ্জনের মতো। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে তাদের কাছে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য নেই। কোনো প্রক্রিয়া চলছে কি-না এবং চললে তা কোন পর্যায়ে আছে, এ সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। এ ব্যাপারে জানতে রিলায়েন্স জিওর সঙ্গে ই-মেইল বার্তা পাঠিয়ে যোগাযোগ করা হলেও জিও কর্তৃপক্ষের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ ও ভারতের টেলিযোগাযোগ খাত-সংক্রান্ত দুটি সূত্র জানায়, প্রায় চার মাস আগে ভিয়নের পক্ষ থেকে বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন বিক্রির জন্য ক্রেতা খোঁজা শুরু হয়। রিলায়েন্স জিও আগ্রহ দেখালে গত মার্চের শেষ সপ্তাহে মুম্বাইয়ে ভিয়ন ও রিলায়েন্স জিওর মধ্যে উল্লিখিত বৈঠকটি হয়। রিলায়েন্স জিওর প্রধান কার্যালয় মুম্বাইয়ে।
সূত্র জানায়, মুম্বাইয়ের বৈঠকে বাংলালিংকের শেয়ার কেনাবেচার ব্যাপারে ভিয়ন ও রিলায়েন্স জিওর মধ্যে ঐকমত্য হয়। এরপরই এ-সংক্রান্ত অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াও শুরু হয়। আগামী জুনের মধ্যে বিটিআরসির কাছে শেয়ার হস্তান্তরের অনুমোদনের জন্য আবেদন করার কথা রয়েছে। এ ছাড়া আগস্টের শেষ সপ্তাহে কিংবা সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে রিলায়েন্স জিওর পক্ষ থেকে বাংলালিংক অধিগ্রহণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রাও মুম্বাইয়ে বৈঠকে নির্ধারণ করা হয় বলে সূত্র জানায়।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান জহুরুল হক এ বিষয়ে জানান, এখন পর্যন্ত বাংলালিংকের পক্ষ থেকে শেয়ার হস্তান্তর-সংক্রান্ত কোনো আবেদন বিটিআরসি পায়নি। আবেদন পেলে আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভারতের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (টিআরএআই) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী (গত ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত হালনাগাদকৃত) এ মুহূর্তে রিলায়েন্স জিওর গ্রাহক সংখ্যা ৩০ কোটি ৬০ লাখ। মার্কেট শেয়ার ২৫ দশমিক ১১ শতাংশ। গ্রাহক সংখ্যার বিবেচনায় তারা ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর। ভারতে সবচেয়ে বেশি গ্রাহক ভোডাফোন আইডিয়া লিমিটেডের। তাদের গ্রাহক সংখ্যা ৩০ কোটি ৮৭ লাখ এবং মার্কেট শেয়ার ৩৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
অন্যদিকে বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী বাংলালিংক গ্রাহক সংখ্যায় এ মুহূর্তে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর। বর্তমানে বাংলালিংকের গ্রাহক সংখ্যা তিন কোটি ৪৩ লাখ ৭২ হাজার। দেশে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে থাকা দুই অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবির গ্রাহক সংখ্যা যথাক্রমে সাত কোটি ৪০ লাখ ৫৩ হাজার ও চার কোটি ৭৩ লাখ ৪১ হাজার।
বাংলালিংকের মালিকানা বদলের বৈচিত্র্যময় প্রেক্ষাপট রয়েছে। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশীয় টেলিযোগাযোগ কোম্পানি সেবা টেলিকম ০১৯ কোড নিয়ে ১৯৯৯ সাল থেকে দেশে মোবাইল সেবা দেওয়া শুরু করে। ২০০৪ সালে সেবা টেলিকমের কাছ থেকে মালিকানা কিনে নেয় মিসরের কোম্পানি ওরাসকম। তখন এর নতুন নাম হয় বাংলালিংক। ওরাসকম মালিকানা গ্রহণের এক বছরের মধ্যেই এর গ্রাহক সংখ্যা কোটি ছাড়িয়ে যায়। বাংলালিংক দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল অপারেটরে পরিণত হয়।
এরপর ওরাসকমের শতভাগ মালিকানা কিনে নেয় গ্লোবাল টেলিকম হোল্ডিংস লিমিটেড (জিটিএইচ), ফলে বাংলালিংকও জিটিএইচের অন্তর্ভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এই জিটিএইচের মালিকানাধীন মালটাভিত্তিক টেলিকম ভেঞ্চারস লিমিটেডের একটি কোম্পানি হয় বাংলালিংক। পরবর্তী সময়ে জিটিএইচের বৃহত্তম শেয়ারের মালিকানা যায় ইউরোপীয় বহুজাতিক কোম্পানি ভিম্পেলকমের হাতে। ২০১৭ সালে ভিম্পেলকমের নাম বদলে হয়ে যায় ভিয়ন। গত বছর ভিয়ন জিটিএইচের পুরোপুরি মালিকানা কিনে নেওয়ার পর বাংলালিংকের মালিকানাও যায় তাদের কাছে। রিলায়েন্স জিওর সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে বাংলালিংকের মালিকানা বদলের আরও একটি অধ্যায়ের সূচনা এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
২০১০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওয়ারিদ টেলিকমের বাংলাদেশ অংশের মালিকানা কিনে নিয়ে ভারতের এয়ারটেল বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে। ২০১৬ সালে এয়ারটেল মালয়েশয়ার কোম্পানি অজিয়াটার মালিকানাধীন রবির সঙ্গে একীভূত হয়। সূত্র-সমকাল।