কেমন আছেন প্রবীণ অভিনেতারা?

চলে গেলেন নায়ক রাজ রাজ্জাক। তাঁর সমসাময়িক অনেক অভিনেতাই এখন অভিনয় থেকে দূরে। অবসরে চলে গিয়েছেন বলা চলে। মাঝে মধ্যে কারো খোঁজ খবর মিললেও লোক চক্ষুর আঁড়ালে আছেন অনেকে। তাদের একটু খোঁজ খবর নেয়া গেল। সে খোঁজ তুলে ধরা হল।

সৈয়দ হাসান ইমাম

একসময়ের তুখোড় মঞ্চকর্মী। সাংস্কৃতির সব মাধ্যমেই রয়েছে তার পদচারনা। একাশি বছর পার করলেও শারিরিক ভাবে বেশ ভালো আছেন। ছেলে মেয়ে দেশের বাহিরে থাকলে স্ত্রী লায়লা হাসানকে নিয়ে বেশ সুখেই আছেন। নাটক সিনেমায় নিয়মিত অভিনয় করছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও সদর্পে হাজির হচ্ছেন। তার অভিনীত সর্বশেষ সিনেমার নাম ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’।
ফারুক

অনেকেই অভিমান করে আছেন নায়ক রাজ রাজ্জাকের মৃত্যুতে তার পরিবারের পাশে সবাই থাকলেও ফারুক কোথায়? তিনি বর্তমানে চিকিৎসা নিতে সিঙ্গাপুর আছেন। রাজ্জাকের মৃত্যুতে তিনি আরো ভেঙ্গে পড়েন। সেখান থেকে বিবৃতিক দিয়েছেন। তিনিও শারীরিক ভাবে ততটা সুস্থ নন। দীর্ঘদিন চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরে গিয়ে নিজ ব্যবসায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। কিছুদিন ধরে এফডিসিতে তিনি ফিরেছেন। নানা সমস্যায় কথা বলছেন। অনেকে ভালো চোখে দেখেছেন। অনেকে তাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করছেন। কিন্তু এটাই সত্যি তিনিও বাংলা চলচ্চিত্রের একজন কিংবদন্তী। হয়তো তার কোন কথা খারাপ লাগতেই পারে। তাই বলে তাকে সোস্যাল মিডিয়ায় নানাভাবে হেয় করার অনেকেই কারন খুঁজে পান না।

আহমেদ শরীফ

আহমেদ শরীফও বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী নাম। তার অভিনীত প্রথম ছবির নাম ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’ সুভাষ দত্ত পরিচালিত এ ছবিতে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন আহমেদ শরীফ। তবে খলনায়ক হিসেবে ১৯৭৬ সালে তিনি প্রথম অভিনয় করেন দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর পরিচালনায় ‘বন্দুক’ ছবিতে। এ ছবিটি সুপারডুপার হিট হয়।এরপর পা্রয় আটশো সিনেমায় অভিনয় করেছেন। বর্তমানে অভিনয় থেকে দূরে আছেন। তবে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় আছেন। নায়ক রাজ রাজ্জাকের মৃত্যুতে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন। আবেগতাড়িত হয়ে যান। রাজ্জাককে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। আহমেদ শরীফের শারীরিক অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়।

এটিএম শামসুজ্জামান

এখনও অভিনয়ে নিয়মিত আছেন। ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন। এছাড়া প্রয়াত পরিচালক খান আতাউর রহমান, কাজী জহির, সুভাষ দত্তের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। প্রথম কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছেন ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের জন্য। ছবির পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা। এ ছবির মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক। এ পর্যন্ত শতাধিক ছবির চিত্রনাট্য ও কাহিনী লিখেছেন এটিএম শামসুজ্জামান। ১৯৭৫ সালে ‘লাঠিয়াল’ থেকে শুরু করে ‘পাঙ্কু জামাই’ পর্যন্ত অসংখ্য জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। বর্তমানে নাটকে নিয়মিত অভিনয় করছেন। তবে তিনি ব্যাক্তিগত জীবনে সুখী নন বললেই চলে। এক সন্তান আর সন্তানকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ভোগ করছেন। দীর্ঘদিন ধরে কানের সমস্যায় ভুগছেন।

সোহেল রানা

জনপ্রিয় অভিনেতা মাসুদ পারভেজ, যাঁকে আমরা সোহেল রানা নামে চিনি, তিনি দীর্ঘদিন কণ্ঠস্বরে পলিপের কারণে অসুস্থ ছিলেন। এ বছরের শুরুতে পলিপের কারণে গলায় অস্ত্রোপচার হয়। তারপর সুস্থ আছেন বলা চলে।

মাসুদ পারভেজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরপরই চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। প্রযোজক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন পারভেজ ফিল্মস এবং এই প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে চাষী নজরুল ইসলাম এর পরিচালনায় নির্মাণ করেন বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ওরা ১১ জন। এটি মুক্তি পায় ১৯৭২-এ।অভিনেতা ও পরিচালক হিসেবে যাত্রা শুরু ১৯৭৩ সালে। কাজী আনোয়ার হোসেন এর বিখ্যাত কাল্পনিক চরিত্র মাসুদ রানা সিরিজের একটি গল্প অবলম্বনে মাসুদ রানা চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন সোহেল রানা নাম ধারণ করে এবং একই ছবির মাধ্যমে তিনি পরিচালক হিসেবে মাসুদ পারভেজ নামে। এই ছবিটি মুক্তির মাধ্যমে দর্শকরা তাঁকে পর্দায় দেখতে পান ১৯৭৪ সালে। এ পর্যন্ত তিনি অসংখ্য সিনেমা প্রযোজনা পরিচালনা ও অভিনয় করেছেন।

প্রবীর মিত্র

একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা প্রবীর মিত্র। তারও শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। গনমাধ্যমে কিছুদিন আগে বলেছিলেন ‘খুবই অস্বস্তিকর অবস্থায় আছি। হাতে কাজ নেই। কেউ আর আমাকে ডাকে না। আশেপাশে কেউ নেই। মনে হয় ‘আমি বন্ধুবিহীন বড় একা’ একজন মানুষ। ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে তার প্রথম অভিনয়। প্রায় তিন শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। কিন্তু আজ তিনি বেকার জীবন কাটচ্ছেন। অখণ্ড অবসর। বই,পত্রিকা পড়ে আর টিভি দেখতে কতক্ষণ ভালো লাগে। নানা সময় তার এ অস্থিরতার কথা বলেছেন। বাংলা চলচ্চিত্র কি তাকে ভুলতে বসছে?

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, ২৩ আগস্ট ২০১৭,

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস

Scroll to Top