নুসরাত হত্যার দায় স্বীকার করলেন নুর-শামীম

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার অন্যতম দুই আসামি নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম। গতকাল রোববার টানা ১০ ঘণ্টার জবানবন্দিতে নুসরাত হত্যার দায় স্বীকার করেন তারা।

বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া শুরু করেন আসামি নুর উদ্দিন। রাত সাড়ে ৯টায় তার জবানবন্দি নেওয়া শেষ হয়। এর পর রাত দেড়টা পর্যন্ত জবানবন্দি দেন শাহদাত হোসেন শামীম।

এর আগে বিকেল ৩টায় নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীমকে ফেনী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নুর উদ্দিন ও শাহদাত হোসেন শামীম ঘটনার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

জবানবন্দিতে নুর বলেছেন, ‘এপ্রিলের ১ ও ৩ তারিখ কারাগারে আটক মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার সঙ্গে দেখা করেন তিনি। সেখানেই নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। অধ্যক্ষের পরামর্শেই নুসরাতের গায়ে আগুন ধরানো হয়।’

জাবানবন্দি গ্রহণ শেষে রাত ১টার পর ওই দুই আসামিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

এ ব্যাপারে পিবিআই স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাহেরুল হক চৌহান বলেন, ‌‘তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন এবং আদালতে স্বীকার করেছেন। তারা জেলখানা থেকে নির্দেশ পেয়েছে, এরকম অনেক বর্ণনা আসছে। তদন্তের স্বার্থে আর কিছু বলতে চাই না। আরও অনেক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আছে যাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। এরপর বিষয়টি আরও স্পষ্ট করা হবে।\’

তাহেরুল হক চৌহান আরও বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া চারজনের সবাইকে গ্রেপ্তার করতে পারিনি। দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তার করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষার্থী রাফিকে সোনাগাজী ইসলামিয়া মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ১০ এপ্রিল বুধবার রাতে সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের দায়ের করা মামলার তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

গত শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্তকারী সংস্থা বলেছে, দুটি কারণে নুসরাতকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১. শ্লীলতাহানির মামলা করে অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করিয়ে নুসরাত আলেম সমাজকে ‘হেয়’ করেছেন। ২. আসামি শাহাদাত নুসরাতকে বারবার প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু নুসরাত তা গ্রহণ না করায় শাহাদাতও হত্যার পরিকল্পনা করেন।

পিবিআই বলছে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আরও অনেকের নাম উঠে আসতে পারে। তদন্তের কারণে কয়েকজনের নাম এখনই বলা হবে না।

Scroll to Top