রমজানে নিত্যপণ্যের দাম না বাড়াতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সে, ১১টি অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্স উদ্বোধনে এ আহ্বান জানান তিনি।
সারা দেশে ১০০ টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরসহ ১১টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন ও ১৩ টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এসময় বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর উদ্বোধন করেন আরো বেশ কিছু অর্থনৈতিক অঞ্চলের। এর আগে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্থরা, যেন দ্রুত অর্থ ও বিকল্প জমি পায়, তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে বেসরকারি খাতকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা দেয়া হচ্ছে। চলমান অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সরকারি বেসরকারি খাতকে একসাথে কাজ করার আহ্বান তার।
পরে দেশের ৫ জেলার সাথে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন সরকার প্রধান। ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান, আসন্ন রমজানে চিনি-ভোজ্য তেলসহ খাদ্যদ্রব্যের দাম না বাড়ানোর।
হাতিরঝিলে তাকাতে গেলে বিজিএমইএ ভবন একটি বাধা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হাতিরঝিলকে চমৎকারভাবে উন্নয়ন করেছি। এখানে দুটি কাজ। ঢাকা শহরের যে রাস্তা ছিল বেশির ভাগই ছিল উত্তর-দক্ষিণমুখী রাস্তা। পূর্ব-পশ্চিমমুখী রাস্তা ছিলই না। সেই যোগাযোগটা যাতে সুন্দর হয়, পাশাপাশি এই জলাধারকে যেন ধরে রেখে দৃষ্টিনন্দন করা যায় সেটা করতে গিয়ে অনেক মামলা মোকাবেলা করতে হয়েছে। সেই জায়গা থেকে এই বিল্ডিংটা সত্যি কথা বলতে কী- তাকাতে গেলে একটা বাধার মতো মনে হয়।’
পোশাক মালিকদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওই (হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবন) জায়গাটা আমাদের দেয়া। বারবার বলেছিলাম ভবনটা খালের উপর যেন না যায়। সোনারগাঁও হোটেলের সঙ্গে সমন্বয় করে করতে বলেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা যখন পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় এলাম তখন দেখলাম খালের উপর করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সেখানে ব্রিজ দিয়ে ভবনটিতে যেতে হচ্ছে।’
‘আমাদের এমনিতেই জলাধরের সমস্যা। আগুন লাগলে পানির অভাব। সেগুনবাগিচায় একটা খাল ছিল। ধোলাইখালেও ছিল। কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ভবনটা ভেঙে ফেলতে হবে। বিশাল একটা জায়গা দিয়েছি। সেখানে ভবন হচ্ছে৷ এই কাজটা যে হচ্ছে তা ইতিবাচক। কিন্তু তারা ভবনের জন্য জায়গা কিনতে চাননি। আমরা দিয়েছি। যেহেতু কোর্টের রায় সেটা কার্যকর করতে হবে৷ যদি চলে আসা যায় কোর্টের রায় মানা হবে। নতুন ভবন উদ্বোধন করে দিয়েছি। ছয় তলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে। এই কাজ চলতে থাকবে।’
নতুন পণ্যের নতুন বাজার খুজতে রাষ্ট্রদূতদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানের কূটনীতি কিন্তু অর্থনৈতিক কূটনীতি৷ প্রতিটি দূতাবাসকে নির্দেশনা দেয়া আছে। প্রতিটি রাষ্ট্রদূতকে ঢাকায় ঢেকে দীর্ঘ মিটিং করেছি, কোন দেশে বাংলাদেশের কোন কোন পণ্যের বাজার রয়েছে তা খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত ১০ বছরে পোশাক খাতের শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ১৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে আট হাজার টাকা করেছি। মালিকদের জন্য উৎসে করে ছাড় দিয়েছি। বাজেটে কর বসাতে পারি না, কিন্তু কমাতে পারি।’
পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করতে হবে৷আপনাদের নতুন বাজার খুঁজতে হবে এবং গার্মেন্টেসের কিন্তু নতুন নতুন আইটেমও করা যায়। একেক দেশে একেক রকম চাহিদা। ডিজাইন এবং ফ্যাশন ভিন্ন ভিন্ন হয়। প্রতিটি পণ্যের ক্ষেত্রে ফ্যাশন ডিজাইন খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফ্যাশন ডিজাইনিং ইউনিভার্সিটি করা হয়েছে। পোশাক খাত আরও সমৃদ্ধ হোক সেটাই প্রত্যাশা করি।’
নতুন ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘কোর্টের রায় অনুযায়ী ১২ এপ্রিল আমাদের সময় শেষ হয়ে যাবে। ১২ তারিখ থেকেই আমরা নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হবো।’
গণভবনে এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
উত্তরার নতুন ভবনে এসময় বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, প্রথম সহসভাপতি মঈনুদ্দিন আহমেদ মিন্টু, সহসভাপতি এম এম মান্না কচি, সহসভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাছির, বিইউএফটির ভাইস চ্যান্সেলর মোজাফফর ইউ সিদ্দিকী, মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হকসহ সংগঠনটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।