\’আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি,নাঈমকে আমি কোনো কথা শিখিয়ে দেইনি\’

ভাইরাল হওয়া সেই ছোট্ট শিশু নাঈমকে কোনো কথা শিখিয়ে দেননি বলে দাবি করেছেন টিভি উপস্থাপক ও অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয়। আজ মঙ্গলবার এক ভিডিওবার্তায় তিনি এ দাবি জানান।

ভিডিওর শুরুতেই জয় বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম। এখন আপনাদের সামনে কিছু কথা বলবো। কথাগুলো অত্যন্ত জরুরি। কারণ আপনারা সবাই আমার ওপর ক্ষিপ্ত এবং আপনারা আমাকে বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন দিচ্ছেন, থ্রেট দিচ্ছেন। আমার ফেসবুক হ্যাকড হয়েছে। আমাকে গালাগালি দিচ্ছেন। কিন্তু আমি একটি কথা আপনাদের খুব দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, এই যে নাঈম ছেলেটির আমি সাক্ষাৎকার নিয়েছি। আমি সবসময় সাক্ষাৎকারের অনুষ্ঠান করি, কিন্তু আমি আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি যে নাঈমকে আমি কোনো কথা শিখিয়ে দেইনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘নাঈম বক্তব্য নিজের দায়িত্বে দিয়েছে। কিন্তু সে নিজে কোথাও থেকে শিখে এসেছে কি না আমি বলতে পারব না। আমি শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি, আমি এটা বলিনি। তাকে শিখাইনি।’

জাতীয় কোনো নেতা নিয়ে মন্তব্য করার কোনো সাহস নেই জানিয়ে এই উপস্থাপক বলেন, ‘তাদের নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। কারণ তারা সবাই সম্মানিত। জাতীয় নেতা যারা বা যারা এক সময় ক্ষমতায় ছিলেন বা এখন যারা ক্ষমতায় আছেন তারা সবাই সম্মানিত। আমার মতো কোনো ক্ষুদ্র মানুষের তাদেরকে নিয়ে কোনো আলোচনা সাজে না। ’

জয় বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি কোনো বিশেষ দলের সমর্থক হতে পারি। কিন্তু আমি অন্য দল নিয়ে কটূক্তি করা বা অন্য দলের নেতা কটূক্তি করার অধিকার রাখি না এবং আমি সেটা করিও না।’

তিনি আরও বলেন, ‘নাঈম নামের ছোট্ট ছেলেটি যে কথা বলেছে সেটা আমি নিজে শুনেই হতবাক হয়েছি। আমি দ্বিতীয়বার তাকে জিজ্ঞেস করেছি। আমার ইন্টারভিউয়ের উত্তর আমি আসলে এভাবে আশা করিনি। তবে যেহেতু এটা হয়েই গেছে সেক্ষেত্রে আমি একটি দায়িত্ব নিতে পারি, কেন আমি তা প্রচার করেছি? কিন্তু আমি সবসময় মানুষ যা বলে তা মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করি। দর্শকের আছে আমি সবকিছু সঠিকভাবে পৌঁছানোর চেষ্টা করি। ’

‘আপনারা যারা আমাকে ভুল বুঝছেন আমি আপনাদের কাছে একটা রিকোয়েস্ট করবো যে আপনারা আমাকে একদম মিছিমিছি ভুল বুঝছেন। আমার ফেসবুক হ্যাকড করেছেন। আমাকে অপমান করছেন। আমাকে আপনারা থ্রেট দিচ্ছেন। আমার জীবন হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছেন। আমি বলবো যে আমি এর জন্য দায়ী না,’ আরও যোগ করেন জয়।

এই অভিনেতা বলেন, ‘যে যার বক্তব্য দেয়, কোনো বক্তব্য শেখানো নয়। নাঈম ছেলেটির সঙ্গে তার মা-বাবাও ছিল। সে বক্তব্য তার নিজের দায়িত্বে দিয়েছে। সে নিজে শিখে এসেছে কি না সে ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না। আমি একদম হান্ড্রেড পারসেন্ট বলছি, আমি এটি বলিনি, আমি এটি শেখাইনি। ’

‘যদি কখনো কেউ প্রমাণ করতে পারে যে আমি শিখিয়েছি, আমি ওকে শিখিয়ে আমার ইন্টারভিউ নিয়েছি তাহলে আমি কোনোদিনও উপস্থাপনা করবো না। আপনারা না চাইলে আমি উপস্থাপনা প্রফেশনই ছেড়ে দেবো। তাই আপনারা আমাকে অপমান, অপদস্ত ও থ্রেট দেবেন না। আমি বাঁচতে চাই, থাকতে চাই, কাজ করতে চাই।’

নিজেকে খুবই সাধারণ একজন মানুষ দাবি করে জয় বলেন, ‘আমার সেই জায়গাটা আপনারা ক্ষতি করবেন না। আমি মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী- সবার কাছে আমি জীবন ভিক্ষা চাই। কারণ আমি যে ধরনের থ্রেট পাচ্ছি সে ধরনের থ্রেট নিয়ে বেঁচে থাকা আসলেই খুবই মুশকিল। আপনারা সবাই ভালো থাকবেন। আমাকে ক্ষমা করবেন, ধন্যবাদ। ’

গত ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের সময় পানির পাইপের ছিদ্র দুই হাতে চেপে ধরে আলোচনায় ছোট্ট শিশু নাঈম। এ ঘটনার পরদিনই তার সাক্ষাৎকার নেয় টিভি উপস্থাপক ও অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয়। ওই সময় নাঈমের সঙ্গে তার বাবা-মাও ছিলেন।

অনুষ্ঠানে নাঈমকে উপস্থাপক জয় প্রশ্ন করেন, সে পুরস্কারের সেই টাকাগুলো নেবে কি না? আর নিলেও সেই টাকা কীভাবে খরচ করবে? উত্তরে নাঈম জানায়, টাকাগুলো এতিমখানার অনাথ শিশুদের জন্য দান করে দিতে চায় সে। ছেলের এ জবাবে সায় দেন তার মা-বাবাও।

এতিমখানায় কেন টাকা দিতে চায়, এমন প্রশ্নের উত্তরে নাঈম জানায়, কয়েক বছর আগে খালেদা জিয়া এতিমের টাকা লুট করেছে। তাই এই টাকা সে এতিমদের দিতে চায়।

পরে নাঈমকে উপস্থাপক জয় এসব শিখিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠে। গতকাল সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘নাঈম রাজনীতির শিকার জানিয়ে ওমর ফারুক সামি ৫ হাজার ডলার দেবেন না’ এমন কথা ঘুরে ফিরতে থাকে।

বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নাঈমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন গণমাধ্যমকর্মী ও কণ্ঠশিল্পী আমিরুল মোমিনিন মানিক। আজ মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়।

সেই ভিডিওতে আমিরুল মোমিনিন মানিক নাঈমকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, ‘এটা বলতে তারা শিখিয়ে দিয়েছিল।’ এ বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করে আজ ফেসবুকে নতুন একটি ভিডিও আপলোড করে বিষয় খোলাসা করলেন উপস্থাপক জয়।

Scroll to Top