শৈশবে মেসির খেলার সঙ্গী ছিলেন মেসিরই বাল্যবন্ধু লুকাস স্কাগিলার আত্মীয় আন্তোনেল্লা। তাঁর পরিচিতরা বলেন, শুধু আন্তোনেল্লাকে দেখার জন্য মেসি নানা অজুহাতে প্রায়ই বন্ধুর বাড়ি যেতেন। মাঠে চিরকাল নির্বিবাদী, সুশৃঙ্খল এবং মুখচোরা বলেই পরিচিত লিওনেল মেসি। তবে নিজের প্রেমকে কোনও দিনই সংবাদমাধ্যমের কাছে লুকিয়ে রাখেননি তিনি। বরং তিনি যে পত্নীনিষ্ঠ ভদ্রলোক, তার ইঙ্গিত বারবার দিয়েছেন তিনি।
লিওনেল মেসি প্রতিবার বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তাঁর জীবনে স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর ভূমিকার কথা স্বীকার করেছেন। জানিছেন, আন্তোনেল্লার প্রেরণা ও নিরন্তর উৎসাহ না পেলে তিনি এত দূর আসতেই পারতেন না।
বহুকাঙ্ক্ষিত বিশ্বকাপ নিয়ে গোটা আর্জেন্টিনা টিম যখন উল্লাসে ব্যস্ত, তখনই দেখা গেল সকলের মধ্যমণি মেসি হাতের ইশারায় কাউকে ডাকছেন। পরে দেখা গেল তিনি আসলে দর্শকাসনে বসে থাকা তাঁর স্ত্রী, দুই সন্তান এবং মাকে ডাকছিলেন।
পরে স্ত্রী আন্তোনেল্লার সঙ্গে বিশ্বকাপ হাতে ছবি তুলতেও দেখা গেল মেসিকে। স্বামীর গরবে গরবিনী আন্তোনেল্লাও টুইট করেন, ‘‘বহু যন্ত্রণা শেষে, সব পাওয়ার দেশে।”
আন্তোনেল্লার সঙ্গে মেসির আলাপ তো আজকের নয়। তাঁদের সুখী দাম্পত্যের রসায়ন লুকিয়ে রয়েছে আর্জেন্টিনার রোজ়ারিও শহরে। সেই শহরেই জন্ম মেসি ও আন্তোনেল্লার। তাঁরা ৫ বছর বয়স থেকে চেনেন একে অপরকে।
মেসিরই বাল্যবন্ধু, ফুটবলার লুকাস স্কাগিলার আত্মীয় আন্তোনেল্লা শৈশবে মেসির খেলার সঙ্গীও বটে। তারপর স্কুল, কলেজ পর্যন্ত আন্তোনেল্লাকে ‘ভাল বন্ধু’ বলেই পরিচয় দিয়ে এসেছেন মেসি। মেসির ঘনিষ্ঠজনেরা বলে থাকেন, শুধু আন্তোনেল্লাকে দেখার জন্যই নাকি নানা অজুহাতে বন্ধুর বাড়ি চলে যেতেন মেসি।
দু’জনে কাছাকাছি থাকতে থাকতে তারপর হঠাৎই একদিন একে অপরের থেকে অনেকটাই দূরে সরে যান। ২০০০ সালে মাত্র তেরো বছর বয়সে সুদূর স্পেনের একটি ফুটবল ক্লাবের যুব অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিতে চলে যান মেসি। মেসির পরিবারও পাকাপাকি ভাবে চলে যায় স্পেনের শহর বার্সেলোনায়।
২০০৫ সালে একটি দুর্ঘটনার সূত্রে আবার কাছাকাছি আসেন দু’জনে। মেসি খবর পান আন্তোনেল্লার প্রিয় বন্ধু একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। সমবেদনা জানাতেই শৈশবের বন্ধুকে ফোন করেন মেসি।
সেই সময় কিছু দিনের জন্য নিজের শহর রোজ়ারিওতে ফিরেছিলেন মেসি। শৈশবের শহর মেসির জীবনে ফিরিয়ে দিয়েছিল শৈশবের বন্ধুত্বকেও।
তবে এবার শুধু বন্ধুত্বই নয়, তার সঙ্গে থাকল অনুরাগের ছোঁয়াও। মেসি নিজেই জানিয়েছেন, ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন জায়গায় একসঙ্গে বেড়াতে যেতেন দু’জনে। তবে ২০১০ সালেই প্রথম আন্তোনেল্লাকে প্রেম প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। সেই বছরই প্রকাশ্যে এসেছিল তাঁদের প্রেমকাহিনি।
২০১৭ সালে রোজ়ারিও শহরে এক জমকালো অনুষ্ঠানে বিয়ে হয় মেসি ও আন্তোনেলার। এই দম্পত্তির প্রথম সন্তান থিয়েগো জন্মগ্রহণ করে ২০১২ সালে। ২০১৫ সালে জন্ম নেয় মধ্যম পুত্র মাতেও। আর ২০১৮ সালে আন্তোনেল্লা তাঁদের কনিষ্ঠ সন্তান সিরোর জন্ম দেন।
প্রথম বার যখন আন্তোনেল্লা যখন সন্তানসম্ভবা হন, তখন ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে জেতার পরে নিজের জার্সির ভিতরে বল ঢুকিয়ে উল্লাস করতে দেখা যায় মেসিকে। স্ত্রীয়ের পাশে থাকার বার্তা দিতেই এই অভিনব কাজটি করেছিলেন মেসি।
পেশাগত দিক থেকে আন্তোনেল্লা এক জন সফল মডেল। বিভিন্ন নামীদামী পণ্যের বিজ্ঞাপনে নিয়মিত দেখা যায় তাঁকে। এ ছাড়াও আর্জেন্টিনায় একটি জনপ্রিয় বুটিক চালান তিনি।
তাঁর এই বুটিকের ব্যবসায় আর এক অংশীদার হলেন সোফিয়া বালবি, যিনি আবার উরুগুয়ের প্রখ্যাত ফুটবলার লুইস সুয়ারেজের স্ত্রী। বস্তুত, বহু বার বিতর্কে জড়িয়েছিলেন সুয়ারেজ। তবে ছোটবেলায় দন্ত চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন আন্তোনেল্লা। সেই স্বপ্ন তাঁর পূরণ হয়নি।
সে স্বপ্ন পূরণ না হলেও তিনি পেয়েছেন তাঁর মনের মানুষকে। আন্তোনেল্লার প্রশংসায় পঞ্চমুখ মেসি ২০১৯ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “ও ভীষণ ঠান্ডা মাথার এক জন মানুষ। কী ভাবে ও সব সমস্যার সমাধান করে ফেলে, তা ও ছাড়া কেউ বুঝতে পারবে না।”
সংবাদ সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা